ইতিহাসে সবথেকে ভয়ানক করুন পরিণতি, যার ফলে একটা চড়ুই পাখি হয়েছিল ৪ কোটি মানুষের মৃত্যুর কারণ

মহান আল্লাহ তা’লা প্রত্যেকটি প্রানীকে তার রিজিক দিয়ে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন।ক্ষুদ্র পিঁপড়া থেকে শুরু করে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ সকলেই তার রিজিক নিয়ে দুনিয়াতে এসেছে।আল্লাহর দান করা রিজিকে যে বা যারা হস্তক্ষেপ করছে তাদের জীবনে নেমে এসেছে ধ্বংস।একটি চড়ুই পাখির রিজিকে হস্তক্ষেপ করে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ানক ভুল করেছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট মাও সে তুং। তার এই ভুলের মাশুল স্বরূপ ৪ কোটি চাইনিজ মানুষকে জীবন দিতে হয়েছিল।
হাদিস শরীফে বর্ণনা অনুযায়ী,রাসুল (সাঃ)বলেছেন “সকালে ফজরের নামাজের পর বাসা থেকে বের হওয়া একটি ছোট্ট পাখি থেকে শুরু করে সমুদ্রের বড় তিমি মাছটিকে পর্যন্ত আল্লাহ তা’লা রিজিক দেন।আর তোমরা মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব হয়ে রিজিকের দুশ্চিন্তায় দূর্নীতিগ্রস্থ হয়ে যাও”।আজকে আমরা জানবো,আল্লাহর দেওয়া রিজিকে হস্তক্ষেপ করার ফলে কতটা কঠিন পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছিল চীন এবং তাদের পরিণতি কি হয়েছিল সে সম্পর্কে। চলুন তবে শুরু করা যাক।
কথায় আছে ভুল থেকেই মানুষ শিখে।কিন্তু যখন একটি দেশের সরকার সে জাতির ভবিষ্যতের কথা না ভেবেই আল্লাহর দেওয়া রিজিকের উপর হস্তক্ষেপ করে তখন সেটাকে আর ভুল বলা যায় না।তখন সেটাকে বলা হয় বোকামি।দেশের শাসকের করা একটি ভুলে শুধু যে শাসকই ভুক্তভোগী হয় ব্যাপারটা কিন্তু তেমন না, তার করা ভুলের মাধ্যমে সম্পূর্ণ জাতি ক্ষতিগ্রস্থ হয়।বলছি ১৯৫৮ সালের কথা, তখন চীনের প্রেসিডেন্ট ছিলেন মাও সে তুং।চীন তখন আজকের মতো এতটা উন্নত ও প্রগতিশীল ছিল না।তখন বিশ্বে উন্নত দেশ হিসেবে প্রথম ছিল ব্রিটেন দ্বিতীয় আমেরিকা।মাও সে তুং এর ইচ্ছা ছিল আমেরিকার চেয়ে উন্নত দেশ হিসেবে চীনকে তৈরি করা।এ লক্ষ্যে তিনি সমাজতান্ত্রিক শাসন ব্যাবস্থার প্রচলন করেছিলেন।তিনি তার ইচ্ছামতো সকল নিয়ম-নীতি প্রবর্তণ করতেন।তিনি একসময় ভাবেন যে, যদি সত্যিই দেশকে উন্নত করতে হয় তবে দেশের খাদ্যভান্ডার থেকে যেসকল পাখি ও কীটপতঙ্গ খাবার খেয়ে ফেলে তাদের মেরে ফেলতে হবে।তখন তিনি এসব পাখি ও কীটপতঙ্গের উপর গবেষণা করার নির্দেশ দেন।গবেষণায় দেখা যায় যে,একটি চড়ুই পাখি এক বছরে সাড়ে ৪ কেজি ফসল খায়।তখন তিনি ভাবলেন চীনে না জানি কত কোটি চড়ুই পাখি রয়েছে যারা প্রতিবছর সাড়ে ৪ কেজির মতো ফসল খেয়ে ফেলে আর এই চড়ুই পাখিগুলোকে যদি মেরে ফেলা যায় তবে বিপুল পরিমাণ ফসল বাঁচানো যাবে এবং এই ফসল বিদেশে রপ্তানী করে তারা আমেরিকার চেয়ে উন্নত দেশ হিসেবে পরিনত হবে।এরপর তিনি ইঁদুর, মশা, মাছি এবং চড়ুই পাখি এই প্রানী গুলোকে দেখা মাত্রই হত্যা করার নির্দেশ দেন।তার নির্দেশ অনুযায়ী দেশের জনগনও এ সকল প্রানী নিধন শুরু করল।পাঁচ বছরের ছোট শিশু থেকে শুরু করে দেশের সেনাবাহিনী পর্যন্ত চড়ুই পাখি মারার এই অভিযানে যোগ দিয়েছিল।মানুষজন মশা, মাছি, ইদুরঁ মেরে যতটা না আনন্দ পেত তার থেকে বেশি আনন্দ পেত চড়ুই পাখি হত্যা করে কারন চড়ুই পাখি খুব সহজেই দেখা যেত তাই মারতে ও সুবিধা হতো।সে সময় চড়ুই পাখি মারা প্রতিযোগিতায় রুপ নিয়েছিল যে ব্যাক্তি সবচেয়ে বেশি চড়ুই পাখি মারতে পারত তাকে পুরষ্কার দেওয়া হতো।১৯৫৮ থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত এক বছরে প্রায় ১০০ কোটি চড়ুই পাখি হত্যা করেছিল চীনা নাগরিকরা।এভাবে দুইবছরের মধ্যে চীনে চড়ুই পাখি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যায় তবু চীনের মানুষদের পাখি মারার পৈশাচিক নেশা বিলুপ্ত হয় না। তারা চড়ুইয়ের পরিবর্তে অন্য পাখিদের হত্যা করা শুরু করে।এর ফলে চীনে সকল ধরনের পাখির পরিমাণ অনেক কমে যায়।এই পদ্ধতির ফলে মাও সে তুং সফল হলেও প্রাকৃতিক ভারসম্য নষ্ট হয়ে যায়।মহান আল্লাহর দেওয়া রিজিকের সাথে এত বড় দাম্ভিকতা প্রদর্শনের ফলে চীনে ধীরে ধীরে ফুল, ফল ও ফসলের পরিমাণ কমতে থাকে।অতিরিক্ত পাখি মেরে ফেলার ফলে চীনে কীটপতঙ্গের পরিমাণ কয়েকগুন বেড়ে যায়।পঙ্গপালের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় দ্রুত গতিতে।পঙ্গপালরা দল বেঁধে আসতো এবং কয়েক মিনিটের মধ্যে হাজার হাজার একর জমির ফসল খেয়ে চলে যেত।পঙ্গপালের দল এতটাই বেড়ে যায় যে একবছরের মধ্যে সারা চীনে ফসলের বিপুল পরিমাণ ঘাটতি দেখা দেয়,এর ফলে চীন জুড়ে শুরু হয় দূর্ভিক্ষ।পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয় যে মানুষেরা তাদের ক্ষুধা নিবারনের জন্য গাছের পাতা পর্যন্ত খাওয়া শুরু করে।তখন মাও সে তুং বুঝতে পারেন চড়ুই পাখি যতটা না ফসল খায় তার চেয়ে বেশি ফসল পোকাঁমাকড় খেয়ে ফেলে।তাই তিনি চড়ুই পাখি হত্যার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।কিন্তু ততদিনে খুব দেরি হয়ে গিয়েছিল।চীনে খাদ্যের অভাবে টানা দুই বছরের যে দূর্ভিক্ষ দেখা দেয় তাতে প্রায় চার কোটি মানুষ মারা যায়।
এই ঘটনা থেকে আমরা বুঝলাম যে, দুনিয়াতে প্রত্যেকটি প্রানী তার রিজিক নিয়েই আসে এবং এই রিজিকের উপর হস্তক্ষেপ করার অধিকার কোন প্রানীর নেই।তাই কখনো খাদ্য সংকটের কথা ভেবে কোন প্রানীকেই হত্যা করা উচিত নয়।