হিটলারের জীবনের শেষ ২৪ ঘন্টা

হিটলারের নাম শুনেনি এমন মানুষ দুনিয়াতে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। পুরো নাম এডলফ হিটলার। তিনি ছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মহানায়ক, জার্মানির চ্যান্সেলর, এবং তিনি ৬০ লক্ষ ইহুদীদের নির্বিচারে হত্যা করেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি পরাজিত হয়েছিল। রীতিমতো বাধ্য হয়ে ভার্সাই চুক্তিতে সই করতে হয়েছিল তাদের। অপমানজনক সেই চুক্তিতে যুদ্ধাপরাধীর তকমা দেওয়া হয় জার্মানিকে। যুদ্ধে জখম হয়েছিলেন করপোরাল পদে থাকা হিটলার। যুদ্ধশেষে তিনি যোগ দিয়েছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টিতে। এরপরই চমকপ্রদ উত্থান হিটলারের। পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যেই জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছন তিনি। মূলত তেজিয়ান বক্তৃতা দিয়েই তিনি জনসম্মোহন করা শুরু করেন। জার্মানির অধঃপতনের জন্য দায়ী করতে থাকেন ইহুদি ও বলসেভিকদের। বলতে থাকেন নর্ডিক জার্মানরাই বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জাতি। অচিরেই গোটা বিশ্ব তাদের হাতের তালুতে বন্দি হবে। তাঁর কথা যতই অযৌক্তিক হোক না কেন, বলার ভঙ্গিতেই বাজিমাত হয়ে যেত। লোক পাগল হয়ে যেত তাঁর কথা শুনে। ক্রমে তিনিই হয়ে উঠলেন জার্মানির জনপ্রিয় নেতা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতেই হিটলারের সাফল্যে ভীত হয়ে যায় ইউরোপ। তবে এই মহাযুদ্ধের সবচেয়ে চমকপ্রদ ঘটনা ছিল রাশিয়া ও জার্মানির মধ্যে হওয়া অনাক্রমণ চুক্তি। এক ফ্যাসিস্ট শক্তির সঙ্গে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের এহেন সমঝোতায় যেন সিঁদুরে মেঘ দেখেছিল পশ্চিমি শক্তি। একে একে পোল্যান্ড, নরওয়ে, ডেনমার্ক সব দখল করে নিল নাৎসিরা। হল্যান্ড, বেলজিয়াম কিংবা ফ্রান্সও টিকতে পারল না তাদের সামনে। তাদের সঙ্গে দুরন্ত লড়াই হল ব্রিটেনের। কিন্তু এহেন পরিস্থিতিতে হিটলারের মুখোশ খসে পড়ল।জার্মান বাহিনী রাশিয়ায় আক্রমণ করে।অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসই শেষ পর্যন্ত কাল হয় হিটলারের।রুশ বাহিনীর রণনীতির কাছে মুখথুবড়ে পড়তে লাগলো জার্মানি।মিত্রশক্তির কাছে ক্রমেই কোণঠাসা হতে শুরু করল জার্মানি।ফলে যতই সময় এগোচ্ছিল, ততই ঘনিয়ে আসছিল হিটলারের শেষ দিন।
১৯৪৫ সালের ৩০ এপ্রিল রাশিয়ার নিকট যুদ্ধে চরম পরাজয়ের শিকার এডলফ হিটলার কোনোভাবেই আত্মসমর্পণ করতে নারাজ ছিলেন। রাশিয়ার কাছে আত্মসমর্পণের চেয়ে মৃত্যু তাঁর কাছে শ্রেয় বলে মনে হয়েছিল।৩০ এপ্রিল রাত ৩ টা ৩০ মিনিটে হিটলার নিজে মাথায় পিস্তলের গুলি ছুড়ে আত্মহত্যা করেন এর আগে আরো দুজনকে সে নিজের হাতে হত্যা করেন। একজন হলো– তাঁর খুব প্রিয় সন্তানতুল্য পোষা কুকুর ‘ব্লান্ডি’। আরেকজন হলো— তাঁর প্রেমিকা ইভা ব্রাউন, যার সাথে তাঁর দীর্ঘ ১৫ বছরের সম্পর্ক ছিলো।হিটলার ধারনা করতে পেরেছিল তার উপর মানুষের যত ক্ষোভ ছিলো ক্ষোভ ও আক্রোশ তাঁর প্রিয় জিনিসগুলোর উপরেই পড়বে। হিটলারের মৃত্যুর পর যাতে তাঁর প্রিয় কুকুর ও প্রেমিকা ইভা শত্রুদের ভয়াবহ আক্রোশের শিকার না হয়, তাই হিটলার নিজেই তাদের মৃত্যুর ছক তৈরি করেছিলেন। এতে ইভার সম্মতি ও ছিলো।
পরিকল্পনা মোতাবেক ২৯ এপ্রিল সম্ভবত দুপুরের দিকে, ৩৩ বছরের ইভা ব্রাউনকে বিয়ে করেন তিনি। হিটলার তাঁর বাড়িতে একজন অফিসারের সহায়তায় অত্যন্ত বিষাক্ত সাইনাইড ক্যাপসুল প্রিয় কুকুরটির মুখে তুলে দেন যার ফলে মারা যায় কুকুরটি।
এদিকে ইভা ব্রাউন তাঁর রুমে প্রিয় ব্লাক কালারের ড্রেস পড়ে সাজগোজে ব্যস্ত। এই রাতটা শেষ হওয়া মাত্রই আগামীকাল সূর্যটা তাদের আর দেখা হবেনা। তাই জীবনের শেষ মুহূর্তে কোনো হতাশা নয়, কোনো দুশ্চিন্তা নয়। সে বিউটি কুইনের মতো সেজে হাজির। তাদের খুব কাছের কয়েকজন অফিসার ও তারা দুজন, সবাই একসাথে খুব শান্তমনে ডিনার করলেন। এরপর আড্ডা দিলেন।
হিটলার এবং তাঁর নব বিবাহিত স্ত্রী ইভা ব্রাউন তাদের রুমে চলে গেলেন। হিটলার নিজে দুটো সাইনাইড ক্যাপসুল ইভাকে দিলেন। ইভা খেয়ে সকাল হবার পূর্বেই মৃত্যু বরণ করলেন।
এদিকে হিটলার আত্মহত্যার পূর্বে অফিসারদের থেকে বিদায় নিলেন, তাদের কড়া নির্দেশ দিলেন মৃত্যুর পর যেনো তাঁর মৃতদেহকে পুড়িয়ে ছাই করে ফেলা হয়। শত্রুরা যেনো তাঁর কোনো চিহ্নই খুঁজে না পায়।
৩০ এপ্রিল, ১৯৪৫ মধ্যরাতে হিটলার একদম নিশ্চুপ, নিরব হয়ে একা তাঁর রুমে চলে গেলেন। এতটা নিশ্চুপ এর আগে কখনো কেউ তাকে দেখেনি। ঠিক ৩ টা ৩০ মিনিটে তাঁর রুম থেকে প্রচণ্ড একটা গুলির আওয়াজ আসলো। তিনি আত্মহত্যা করলেন। তার পূর্ব নির্দেশ অনুযায়ী সৈন্যরা তার দেহকে পুড়িয়ে ফেলে এবং দেহাবশেষ তার প্রিয় কুকুর ব্লান্ডির কবরস্থানের পাশে দাফন করে।
এই ছিলো ইতিহাসের ঘৃণিত মানুষ হিটলারের জীবনের শেষ পরিণতি।