
হেতিজা সুলতান ছিলেন একজন উসমানীয় শাহজাদী। সুলতান প্রথম সেলিম ও তার পত্নী হাফসা সুলতানের কন্যা এবং সুলতান সুলাইমানের বোন।
হেতিজার জন্ম তারিখ নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। ঠিক কত সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন তা নিশ্চিত ভাবে জানা যায়নি। তবে তার জন্ম ১৪৯৪ সালের আগেই হয়েছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। তার মা হাফসা সুলতান ছিলেন সুলতান প্রথম সুলাইমানের বোন। ১৫০৯ সালে, অটোম্যান গভর্নর ইস্কান্দার পাশার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন হেতিজা সুলতান। তাদের একমাত্র পুত্রের নাম হানিম সুলতান।
ইস্কান্দার পাশা পরবর্তীতে অটোম্যান অ্যাডমিরাল হিসেবে নিয়োগ পান। কিন্তু ১৫১৫ সালে, সুলতানের নির্দেশ উপেক্ষা করায় মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছিল ইস্কান্দার পাশার।
যদিও হেতিজা সুলতানের বিয়ে নিয়েও অনেক বিতর্ক রয়েছে। এটি দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বাস করা হয়েছিল যে, হেতিজা সুলতান পরবর্তীকালে উজিরে আজম পারগালি ইব্রাহিম পাশাকে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু ইতিহাসবিদ এবরু তুরান ২০০০ এর দশকের শেষের দিকে একটি গবেষণা পরিচালিত করেন। যেখানে তিনি প্রকাশ করেন যে, এই দাবিটি কোন প্রমাণের ভিত্তিতে করা হয় নি এবং বাস্তবে তাদের মধ্যে এইরকম কোনও বিয়েও কখনও হয় নি। ফলস্বরূপ,ঐতিহাসিকরা এখন সাধারণত একমত হন যে, ইব্রাহিম হেতিজাকে নয়, অন্য এক মহিলা মুহসিন হাতুনকে বিয়ে করেছিলেন।
অন্যদিকে অনেক ইতিহাসবিদ এর মতে, ইব্রাহিম পাশা সুলেমানের এক বোনকে বিয়ে করেছিলেন, যদিও এটি প্রমাণ করার মতো কোনও উৎস পাওয়া যায় নি।
এমনকি হামারের মতো আধুনিক ইতিহাসবিদরা প্রায়শই ধরে নিয়েছিলেন যে, ইব্রাহিম পাশার বিয়েতে সুলতানের অংশগ্রহণ নির্দেশ করে যে, ইব্রাহিম পাশার স্ত্রী কেবল সুলেমানের বোনদের একজনই হতে পারেন। তুর্কি ইতিহাসবিদ ইসমাইল হাক্কি উজুনারালি, অটোমান সাম্রাজ্যের গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, “ইব্রাহিম পাশা সুলতান সুলেইমানের বোন হেতিজা সুলতানকে বিয়ে করেছিলেন এবং তাঁর মর্যাদা বাড়িয়েছেন।”
তার এই মতবাদ বিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে আরও সমর্থন লাভ করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে উজুনারালি একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে স্বীকার করেছিলেন যে, তিনি আগের উল্লেখকৃত বিষয়ে ভুল ছিলেন এবং ইব্রাহিম পাশার স্ত্রী কোনও অটোমান রাজকন্যা ছিলেন না। যাইহোক,লিখিত সূত্রে ইব্রাহিম পাশার বিবাহ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেলেও তিনি কাকে বিয়ে করেন সে সম্পর্কে কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। তাই হেতিজা এবং ইব্রাহিম পাশার বিয়ে হয়েছিল কিনা তা জানা যায়নি।
ব্যক্তিগত জীবনে হেতিজা সুলতান এবং সুলতান সুলেইমানের পত্নী হুররাম সুলতানের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক ছিলো না। হেতিজা প্রায়শই হুররাম সুলতান কে অপছন্দ করতেন বলে ধারণা করা হয়।
হেতিজা সুলতানের মৃত্যুর সময় ও সঠিক ভাবে জানা যায় নি। তবে ধারণা করা হয়, তিনি ১৫৪৩ সালের পরে মৃত্যুবরণ করেন। এমনকি তার মৃত্যু কিভাবে হয়েছে সেটা নিয়েও রয়ে গেছে অনেক ধোঁয়াশা। অনেক ইতিহাসবিদ দাবি করেন যে, তিনি বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। অনেকে তার মৃত্যুর জন্যে হুররাম সুলতান কে ও দায়ী করে থাকে। হেতিজা সুলতান কে ইস্তাম্বুলের ইয়াভুজ সেলিম মসজিদ এ সমাধিস্থ করা হয়।