
শাহজাদা মেহমেদ ছিলেন অটোমান সাম্রাজ্যের দশম সুলতান সুলতান সুুুুলেমান খান ও হুররাম সুলতানের সন্তান। মেহমেদ শব্দ টি এসেছে আরবি মুুুুহাম্মদ শব্দের তুুর্কি উচ্চারণ থেকে।
শাহজাদা মেহমেদ ১৫২২ সালের ৩১ অক্টোবর, ইস্তাম্বুলের কন্সট্যান্টটিনোপলে তোপকাপি প্রাসাদে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মেহমেদ যখন জন্মগ্রহণ করেন তখন তার বাবা সুলেমান রোডস অবরোধ (১৫২২) এর অভিযানে ছিলেন। ছেলের জন্ম উপলক্ষে সুলেমান তার জন্ম শিবিরে সদকা বিতরণ করেন। মেহমেদ ছিলেন সুলতান সুলেমান এর দ্বিতীয় স্ত্রী হুররাম সুলতানের গর্ভে জন্ম নেওয়া ৬ সন্তানের মধ্যে প্রথম। তার বাকি ভাই-বোনের নাম যথাক্রমে মিহিরমা সুলতানা, শাহজাদা আবদুল্লাহ, শাহজাদা সেলিম-২, শাহজাদা বায়েজিদ ও শাহজাদা জাহাঙ্গীর।
১৫৩০ সালের ২ জুন, মেহমেদকে তার ভাই শাহজাদা মোস্তফা এবং শাহজাদা সেলিমের সাথে একত্রে সুন্নতে খৎনা করা হয়।
১৫৩৭ সালে, তিনি করফুর অবরোধে তার বাবার সাথে যোগ দেন। ১৫৪১ সালে, তিনি এবং তার দুই ভাই শাহজাদা সেলিম এবং শাহজাদা বায়েজিদ তাদের বাবার সাথে বুদা অবরোধ করেছিলেন। পরবর্তীতে ১৫৪৪ সালে, বাবার পাশাপাশি সফল এস্জেটারগম অবরোধেও অংশ নিয়েছিলেন মেহমেদ।
১৫৪১ সালের ১৬ জুন, মেহমেদ এর সৎ ভাই শাহজাদা মুস্তাফাকে সেখান থেকে আমাসিয়ায় প্রেরণ করা হলে, তার মা হুররাম সুলতান এর প্ররোচনায় মানিসার সানজাক শাসন করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় মেহমেদ কে। ১৫৪২ সালের ১২ নভেম্বর, মানিসায় পৌঁছানোর পরই মেহমেদ আনুষ্ঠানিকভাবে রাজ্যপাল হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করে। যদিও তার মা তার প্রাদেশিক পদে তার সাথে যাননি।
তবে অনেকেই মনে করেন, এখানে হুররাম এর কোনো হাত ছিলো না। বরং সুলেমান নিজেই মনে করতেন, শাহজাদা মেহমেদ এই কাজের জন্যে যে কারো থেকে অধিক যোগ্যতাসম্পন্ন। এমনকি তার প্রথম স্ত্রী মাহিদেভ্রান এর গর্ভে জন্ম নেওয়া তার বড় সন্তান শাহজাদা মুস্তফার চেয়েও। এ থেকে বোঝা যায় যে, সুলেমান মুস্তাফার চেয়ে মেহমেদের পক্ষে কতটা অনুগ্রহ করেছিলেন এবং মতনৈক্য আছে যে সুলতান মেহমদকে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসাবে দেখাতে চেয়েছিলেন। ১৫৪৩ সালে, মেহমেদের একমাত্র সন্তান হুমাশাহ সুলতান মানিসায় জন্মগ্রহণ করেন।
এভলিয়া সেলেবী নামে তৎকালীন একজন পর্যটক তার ভ্রমণ বিবরণীতে মেহমেদকে “মোস্তফার চেয়েও আরও দুর্দান্ত গুণাবলীর রাজপুত্র হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তার মতে, মেহমেদ এর অসাধারণ বুদ্ধি এবং সূক্ষ্ম বিচার-বিবেচনা ছিল। সুলাইমান ইচ্ছা করেছিলেন যে, তিনি তাঁর উত্তরসূরি হবেন, কিন্তু তার সেই ইচ্ছে পূরণ হয়নি।
শাহজাদা মেহমেদ ১৫৪৩ সালের ৩১ অক্টোবর, মানিসা প্রাসাদে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ধারনা করা হয়, গুটি বসন্তে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীতে একই বছরের ৭ নভেম্বর তার মৃত্যু ঘটে। মৃত্যুর পরে তার মরদেহ দাফনের জন্য ইস্তাম্বুলে নেওয়া হয়েছিল। পরে ১৫৫৪ সালে, তার ছোট ভাই সেলিম (ভবিষ্যতের দ্বিতীয় সেলিম) তার স্থলে মানিসার গভর্নর পদে নিযুক্ত হন।
এরপরে, সুুুুলেমান তার মৃত্যুর স্মরণে ইস্তাম্বুলের বিখ্যাত রাজ-স্থপতি মিমার সিনানকে দিয়ে শাহজাদা মসজিদ নির্মাণ করিয়েছিলেন, পরবর্তীতে এই মসজিদ টি মেহমেদের চূড়ান্ত বিশ্রামস্থল হয়। এছাড়াও, সুুুুলেমান তাঁর প্রিয় ছেলের জন্য এক অভিনব পদ্য রচনা করেছিলেন এবং তা “রাজপুত্রদের মধ্যে সর্বাধিক শ্রেষ্ঠ, আমার সুলতান মেহমেদ” এই পংক্তির মাধ্যমে কবিতাটি শেষ করেছিলেন, যার মোট সংখ্যাগত মান তার ছেলের মৃত্যুর বয়স। মেহেমেদের মৃত্যুর পর তার স্মরণে নির্মিত মসজিদ টি পৃষ্ঠপোষকতা করে যে, মেহমেদ সুলতানের সবথেকে প্রিয় ব্যক্তি এবং পুত্র ছিলেন। সুুুুলেমান কেবল মেহমেদের জন্য একটি মসজিদই চালু করেননি, বরং ইস্তাম্বুলেও তার সমাধি নির্মাণ করেছেন যা। যদিও প্রথা অনুসারে শাহজাদাদের বুরসায় দাফন করা হয়। এই থেকে প্রমাণিত হয় যে, সুলতান তার পুত্রকে কতটা ভালোবাসতেন।