এলএসডি কেড়ে নিল ঢাবি শিক্ষার্থীর প্রাণ

লাইসার্জিক এসিড ডাই ইথাইল এমাইড বা সংক্ষেপে এলএসডি নামক শব্দটিই সাম্প্রতিক কালে আলোচনার ঝড় তুলেছে বাংলাদেশের গণমাধ্যমসহ জনমানুষের মনে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত হাফিযুর রহমান এলএসডি নামক এ ড্রাগটি সেবনের পরপরই নিজেকে ছুরিকাঘাতে মেরে ফেললে ঘটনাটি আলোড়িত করে তুলে পুরো বাংলাদেশকে।
এলএসডি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পুরোপুরি অচেনা একটি ড্রাগই বলা চলে।
বাংলাদেশে সাধারণত হিরোইন, ইয়াবা এ ধরণের ড্রাগ পাওয়া গেলেও এ ড্রাগের অস্তিত্ব বাংলাদেশ পুলিশ আগে কোনদিনও এ দেশে খুজে পায় নি। হাফিযুর রহমানের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পুলিশ এ মাদকদ্রব্যের তদন্ত শুরু করলেই মূলত বের হয়ে আসতে শুরু করে এ মাদক দ্রব্যের রহস্য। বেশ বহুল পরিমাণে এলএসডি মাদক দ্রব্য সহ গ্রেফতার হন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন ছাত্র যারা এদেশে ড্রাগের সাপ্লাই দিয়ে যাচ্ছিল।

১৯৬৮ সালে এলএসডি মাদক দ্রব্যকে বিশ্বব্যাপী নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। নিষিদ্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ এই মাদক দ্রব্যে আসক্ত হয়ে পড়েছিল বলে জানা যায়।

এলএসডি সেবন করলে মূলত কোন একজন ব্যাক্তির হ্যালুসিনেশন হয়। আশপাসের সাউন্ড হতে শুরু করে সবকিছুই একসাথে বদলে যেতে থাকে সেবনকারী ব্যাক্তির কাছে। এই ড্রাগকে ব্লটিং পেপারে প্যাক করে আকর্ষনীয় ভাবে বিক্রি করা হয়। ড্রাগটির অন্য নাম পার্পল ড্রাগন। প্রতি ডোজ ৩-৫ হাজার টাকা দিয়ে কিনতে হয়। এ ড্রাগ লিকুইড ফর্মেও পাওয়া যায়। ড্রাগের ইম্প্যাক্ট একজন ব্যাক্তির উপর ৮-১২ ঘন্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়। অতিরিক্ত সেবনে এ ড্রাগের প্রতিক্রিয়া শরীরে বিশ ঘন্টা পর্যন্ত থাকতে পারে।
এ ড্রাগ সেবন করলে ব্যাক্তি নিজেকে বিশাল শক্তিশালী ভাবতে শুরু করে। সে একপর্যায়ে মনে করে সে আকাশে উড়ছে। মাত্রাতিরিক্ত এ ড্রাগের সেবন যেকোন ব্যাক্তির মৃত্যুর কারণ পর্যন্ত হতে পারে।
সারা বিশ্বব্যাপী এ ড্রাগ নিষিদ্ধ করা হলেও নেদারল্যান্ডসে ‘ড্রাগ ল’ বেশ শিথিল। সেখান থেকেই এ ড্রাগ কোনভাবে আমদানি করা হয়েছে এ দেশে।
এতটা ব্যায়বহুল ও আত্মবিধ্বংসী ড্রাগের নেশা যেকোন জাতির যুব সমাজকে একেবারে নিঃশেষ করে দিতে পারে। আজ যদি এ ড্রাগ হতে দেশকে না বাঁচানো সম্ভব না হয় তবে তা শীঘ্রই আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে খোকলা করে দিবে।
মুহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহ খাঁন
(ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)