চলে গেলেন মঞ্চ ও টেলিভিশন অভিনেতা এস এম মহসীন

গত কিছুদিন থেকে একের পর এক গুনীজন হারাচ্ছি আমরা। অনেকেই মনে করছেন, দেশ মেধা শূন্য হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। মহামারী করোনায় এবার চলে গেলেন দেশের প্রখ্যাত অভিনয়শিল্পী, মঞ্চ ও টেলিভিশন অভিনেতা, নাট্য শিক্ষক এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম মহসীন। চার দশকের বেশি সময় ধরে মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। আজ চলুন এস এম মহসীন কে জেনে আসি।
এস এম মহসীন ১৯৪৮ সালে, টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলার আনাইতারা ইউনিয়নের খাগুটিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে রেজওয়ান মহসিন ও রাশেক মহসিন নামে দুই ছেলে রয়েছে তার। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ও সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে।
কর্মজীবনে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্য বিভাগ অনুষদের সদস্য হিসেবে ছিলেন এছাড়াও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক হিসেবে এবং জাতীয় থিয়েটারের প্রথম প্রকল্প পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন।
অভিনয় জীবনে অসংখ্য নাটক, চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন তিনি। ‘পদক্ষেপ’ নামক নাটকের মধ্য দিয়ে তিনি রেডিও নাটকে আত্মপ্রকাশ করেন। পরবর্তীতে তিনি আতিকুল হক চৌধুরী পরিচালিত ‘রক্তে ভেজা’ ও ‘কবর’ নাটকে এবং মুনীর চৌধুরী পরিচালিত ‘চিঠি’ এবং ‘সুবচন নির্বাসনে’ সহ বেশ কয়েকটি মঞ্চনাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। এছাড়াও তিনি থিয়েটার দল ড্রামা সার্কল-এ অভিনয় করেছেন।
অনিমেষ আইচের পরিচালনায় ‘গরম ভাত অথবা নিছক ভূতের গল্প’ নাটকের অভিনয় করে বোদ্ধামহলে প্রশংসিত হয়েছেন এ প্রবীণ অভিনয়শিল্পী। এটি ছাড়াও ‘মহর আলী’, ‘সাকিন সারিসুরি’ সহ বেশ কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি।
পরিচালক ওয়াজেদ আলী সুমনের পরিচালনায় ‘অন্তরাত্মা’ চলচ্চিত্রের শুটিংয়ে অংশ নিয়েছিলেন ফেব্রুয়ারি মাসে। এটি ই ছিলো তার জীবনের শেষ চলচ্চিত্রের কাজ।
২০০৭ সালে, ‘গরম ভাত অথবা নিছক ভূতের গল্প’ টেলিভিশন নাটকে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ টিভি অভিনেতার জন্য মেরিল-প্রথম আলো সমালোচক পুরস্কার অর্জন করেন তিনি। তিনি ২০১৮ সালে বাংলা একাডেমির সন্মানিত ফেলো লাভ করেন। পেয়েছেন শিল্পকলা পদকও। ২০২০ সালে, অভিনয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করেন।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অত্যন্ত সাধাসিধে একজন মানুষ ছিলেন। এত খ্যাতি থাকা স্বত্তেও অত্যন্ত সহজ জীবন যাপন ছিল তার।
এস এম মহসীনের মৃত্যুতে আঘাত পেয়েছেন অনেক মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। তার সম্পর্কে বলতে গিয়ে ইত্যাদির পরিচালক হানিফ সংকেত বলেন, “এস এম মহসিনকেও আমরা করোনার কারণে হারালাম। তিনি মঞ্চ ও টেলিভিশনে দারুণ সব কাজ উপহার দিয়েছেন। মেধাবী এই অভিনেতা প্রায় নিয়মিতই ইত্যাদিতে অভিনয় করতেন। ইত্যাদিতে তার সর্বশেষ অভিনয় ছিল এ বছরেরই জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ নেভাল অ্যাকাডেমিতে ধারণ করা পর্বটিতে। তার মৃত্যুতে ইত্যাদি পরিবারের সবাই গভীরভাবে শোকাহত”।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব তারিক আনাম খান বলেন, “স্কুলের হোস্টেল, ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যক্তিগত সব সমস্যার সমাধান এই মোহসিন দাদা। আমাদের বাংলাদেশি ছাত্রদের নির্ভরতার নাম মোহসিন ভাই। ভালোই তো ছিলেন। যোগ ব্যায়ামের সর্বোচ্চ নম্বরধারী। ভীষণ শৃঙ্খলা জীবন যাপনে। করোনা তাকেও রেহাই দিল না”!
সম্প্রতি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন এস এম মহসীন। তার ফুসফুসের প্রায় ৭০% করোনায় সংক্রমিত হয়ে পড়েছিল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৮ এপ্রিল ২০২১ রবিবার, সকাল ৯টায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।
রোববার আসরের পর পরীবাগ মসজিদে জানাজা ও ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান শেষে আজিমপুর কবরস্থানে এস এম মহসীনকে সমাহিত করা হয়।
লেখক- সায়মা আফরোজ (নিয়মিত কন্ট্রিবিউটর AFB Daily)
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়