
নতুন মোড় নিলো তুর্কি-চীন সম্পর্কে। সম্প্রতি জানা গিয়েছে চীনা দূতাবাসের পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে তুর্কি সরকার।
অদ্ভূত এ কান্ডের নেপথ্যে বেশ গম্ভীর কারণ রয়েছে। তূর্কি’র অন্যতম গণমাধ্যম আনাদুলু এজেন্সির এক রিপোর্ট হতে জানা যায় বেশ কয়েকদিন আগে তুরস্কের আঙ্কারা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মনসুর ইয়াবাস চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের নির্যাতিত উইঘুর মুসলিমদের উপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে নানা ভাবে প্রতিবাদ জানাতে থাকে। বিষয়টি ভালো ভাবে নেয়নি চীনা কতৃপক্ষ। ঐ প্রতিবাদের জের ধরেই আঙ্কারার মেয়র মনসুর ইয়াবাস কে সম্প্রতি কড়া ভাষায় কূটনৈতিক চিঠি দেয় সেখানকার চীনা দূতাবাস। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে আঙ্কারার সে মেয়র এবার দূতাবাসের পানির সংযোগই বিচ্ছিন করে দিয়েছেন।
স্থানীয় “ডুভার ইংলিশ” নামের একটি স্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জানায়, উইঘুর নিয়ে মন্তব্যের জের ধরে সম্প্রতি চীনা দূতাবাস আঙ্কারার সিটি মেয়র মনসুর ইয়াবাস বরাবর কড়া ভাষায় একটি চিঠি লিখে প্রতিবাদ জানায়। এতে ক্ষিপ্ত হন আঙ্কারার মেয়র। এরপরই চীনা দূতাবাস অবস্থিত এলাকায় অবৈধ পানির সংযোগ চিহ্নিত করার অভিযান শুরু করে আঙ্কারা সিটি কর্পোরেশন। অভিযানের মাঝেই এবার বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয় বিশ্বের অন্যতম সুপারপাওয়ার দেশ হিসেবে পরিচিত চীনা দূতাবাসের পানির সংযোগ।

উল্লেখ্য, এত সব ঘটনার নেপথ্যে যে জিনজিয়াং প্রদেশের উইঘুর মুসলিম জাতি, সে জাতিকে বর্তমান বিশ্বের সর্বাধিক নির্যাতিত জাতিগুলোর একটি হিসেবেই বিবেচনা করা হয়ে থাকে। এক কোটি দশ লাখের মত জনসংখ্যা নিয়ে গঠিত এ জাতি। সংবিধান অনুসারে স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশে এ জাতির বসবাসের কথা থাকলেও এটি চীনাদের সবচেয়ে রক্ষণশীল একটি প্রদেশ হিসেবে পরিচিত। অদ্ভূত হলেও সত্য বিবিসি’র তথ্য মতে ১কোটি ১০,১৫ লাখ জনসংখ্যা নিয়ে গড়ে উঠা এ জনপদের ২০ লাখের অধিক মানুষ এখন চীনা বন্দিশিবিরে বন্দি!
প্রদেশটিতে যেকোন ধরণের মিডিয়া একেবারে নিষিদ্ধ করে রেখেছে দেশটির সরকার। তাই সেখান হতে প্রকৃত তথ্য বের করে নিয়ে আসা প্রায় অসম্ভবই বলা চলে। বিবিসি’র সাংবাদিকরা নানাভাবে সে এলাকায় প্রবেশ করেছেন এবং তাদের তথ্যমতে, যেখানেই তারা গিয়েছেন চোখে পড়েছে বিভিন্ন বন্দি ক্যাম্প ও অস্বাভাবিক হারে পুলিশের আনাগোনা। প্রত্যেকের মোবাইল ফোনই সেখানে সরকারী কর্মকর্তারা চেক করে দেখেন। সর্বত্রই তাদের চোখে ক্যামেরা চোখে পড়েছে। এসব ক্যাম্প হতে পালাতে পারা কয়েকজনের সাথে বিবিসি’র সাংবাদিকরা কথা বলার সুযোগ পায় তাদের মধ্যেই একজন ওমি ;
নির্যাতিত ওমির বিবিসিকে বলে;
“তারা আমাদের ঘুমাতে দেয়নি। কয়েক ঘণ্টা ধরে আমাকে ঝুলিয়ে রেখে পেটানো হতো। কাঠ ও রবারের লাঠি দিয়ে পেটাতো। তার দিয়ে বানানো হতো চাবুক। সুই দিয়ে শরীরে ফুটানো হতো। প্লাইয়ার দিয়ে তুলে নেওয়া হতো নখ। আমার সামনে টেবিলের ওপর এসব যন্ত্রপাতি রাখা হতো। এসময় অন্যরা যে ভয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করতো সেটাও আমি শুনতে পেতাম।”
এছাড়াও জিনজিয়াং প্রদেশের এসকল মুসলিমদের অত্যাচারিত হওয়ার আরো বিশদ
বর্ণনা পাওয়া যায়। সারা বিশ্বই চীনাদের এরূপ কাজের জন্য তাদের নিন্দিত করতে থাকলেও কোন কিছুকেই গায়ে মাখতে নারাজ চীনা সরকার, তাদের মতে তারা জঙ্গীদের প্রতিরোধ করছে। তুর্কি সরকার ও তাদের প্রতিনিধিরা এবারই যে প্রথম এ বিষয়ে মুখ খুলেছে এমনটা নয়, গর বেশ কয়েক বৎসর যাবৎই উইঘুর মুসলিমদের হয়ে নানাভাবে চীনা সরকারকে চাপ দিয়ে যাচ্ছে তুর্কি সরকার। এবার তূর্কি মেয়র মনসুর ইয়াবাস এ বিষয়ে কথা বলা শুরু করেন যেটির প্রতিবাদ চীনা সরকার জানালে নিজ ক্ষমতার অধীনে থাকা শক্তিকে ব্যবহার করে অদ্ভূত ধরণের প্রতিশোধ নেন তুর্কি এ মেয়র।
মুহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহ খাঁন (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
আরো পড়ুনঃ
নাউরো-সকালে ধনী, বিকালে ফকির ;https://cutt.ly/2cBq8mi