তুরস্কে অবসরপ্রাপ্ত ১০৩ এডমিরালের পক্ষ থেকে সামরিক বিদ্রোহের হুমকি

তুরস্ক, সাম্প্রতিক কালে বিশ্ব রাজনীতিতে অন্যতম আলোচিত দেশ হিসেবে পরিচিত এ দেশটি আবারো নিজ দেশের আভ্যন্তরীণ কিছু কর্মকান্ডের জন্য পুনরায় আলোচনায় উঠে এসেছে।
সম্প্রতি তুরস্কের ক্ষমতাসীন এরদোয়ান সরকার বেশকিছু ইসলাম পন্থী সিদ্ধান্ত নিয়েছে যাতে তেতে উঠেছে দেশটির সেক্যুলার পন্থী ফ্রন্টগুলো। সেক্যুলার পন্থী দলগুলোর তেতে উঠার মূল কারণ হিসেবে প্রধানত দেখা হচ্ছে তুরস্ক সরকাররের ইস্তাম্বুল কনভেনশন হতে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়ে আসাকেই । ইস্তাম্বুল কনভেনশনের কারণে মূলত তুরস্ককে এতদিন যাবৎ নারীদের বিষয়ে ইউরোপীয় বাধ্য-বাধকতা সমূহ মানতে বাধ্য হচ্ছিল। বেশ কয়েক বছর যাবৎই তুরস্কের ইসলাম পন্থী মানুষরা এ কনভেনশন বাতিলের জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছিল, কেননা চুক্তিটির বেশ কিছু আইন ইসলামের সাথে বেশ সাংঘর্ষিক ছিল। অবস্থার এরূপ প্রেক্ষাপটে কয়েক সপ্তাহ আগে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান তার নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করে এ কনভেনশন হতে তুরস্ককে প্রত্যাহার করে নেন। এরপর হতেই মূলত ক্ষোভে ফেটে পড়ে তুরস্কের সেক্যুলার,ফেমিনিস্ট সমাজ ও আতার্তুক পন্থী সমর্থকরা।
শুধু যে ইস্তাম্বুল কনভেনশনই এরূপ বিক্ষোভে ফেটে পড়ার একমাত্র কারণ তেমনটা নয় এর পাশাপাশি আরো বেশকিছু চুক্তি যা হতে তুরস্ক নিজেদের বের করে নিয়ে আসতে চাইছে সেগুলোও অন্যতম কারণ। চুক্তিগুলোর মাঝে অন্যতম তুরস্কের গোলামীর শিকল হিসেবে বিখ্যাত লুজান চুক্তি এছাড়াও মন্ট্রেক্স বসফরাস চুক্তি যে চুক্তিগুলোকে তুরস্কের সেক্যুলার সহ কামাল আতার্তুক পন্থীরা নিজেদের গৌরব বলে মনে করলেও এরদোয়ান সহ তুরস্কের ইসলাম পন্থী দলগুলো ভেবে থাকে নিজেদের গোলামীর শিকল হিসেবে।

লুজান চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর যার মাধ্যমে তুরস্ককে শর্তসাপেক্ষে স্বাধীনতা দেয়া হয় একইসাথে এ চুক্তিটির মাধ্যমেই জাতি হিসেবে তুর্কিদের উপর অনেক কঠিন কিছু বাধা-নিষেধ প্রদান করা হয় যেটির বাধন থেকে আজও তারা পুরোপুরি মুক্ত হতে পারে নি। মন্ট্রেক্স চুক্তি লুজান চুক্তির কয়েক বছর পর ১৯৩৬ সালে স্বাক্ষরিত হয়। যার মাধ্যমে তুরস্ক শর্তসাপেক্ষে বসফরাসের কতৃত্ব পায়৷ ইদানিংকালে বেশ জোরেশোরেই এ দু’টি চুক্তি হতে নিজেদের প্রত্যাহার করার আলোচনা সংসদে চালু করার তোরজোড় শুরু করেছে তুর্কি সরকার। উল্লেখ্য তুরস্ক নিজ দেশের মাঝ দিয়ে সাম্প্রতিক কালে ইস্তাম্বুল চ্যানেল বা সহজ ভাষায় একটি খাল তৈরি করছে করছে যার সাথে মন্ট্রেক্স চুক্তির বড় সম্পর্ক রয়েছে। কারণ, এ চ্যানেলটি তৈরি হয়ে গেলে আর শর্তসাপেক্ষে নয় স্বভাবত ভৌগলিক ভাবেই পুরো বসফরাসের কোনরূপ শর্তহীন কতৃত্ব চলে আসবে তুরস্কের হাতে।
ঠিক এমন অবস্থাতেই অতি সম্প্রতি প্রকাশিত একটি বিবৃতি পাঠানো হয় তুরস্কের নৌ বাহিনীর সাবেক ১০৩ এডমিরালের পক্ষ থেকে। যার মাধ্যমে তারা সরকারকে সতর্ক করে দিচ্ছে যেন কোনভাবেই তুরস্ককে মন্ট্রেক্স চুক্তি হতে প্রত্যাহার করে না নেয়া হয়, অন্যথা তারা দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছে যা আসলে ক্যু’য়ের হুমকি।

এ নিয়ে তুরস্কের মিডিয়াতে তুমুল আলোচনা সমালোচনা চলছে একইসাথে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান জরুরী ভাবে দলের উচ্চপর্যায়ের সভা আহবান করেছেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত হুমকি দেয়া এডমিরালের মাঝে ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও জানা যায়। টুইটার এবং নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নানা হ্যাশট্যাগে তুরস্কের মানুষরা আসন্ন পরিস্থিতির পক্ষে বিপক্ষে টুইট করে যাচ্ছেন। বিশেষত সেক্যুলার-কামালিস্ট পন্থীরা এডমিরালদের পক্ষে টুইট করে যাচ্ছে। অপরদিকে সরকার এবং ইসলাম পন্থীরা বছরখানেক আগে হওয়া ১৫ জুলাইয়ের সে ব্যার্থ সামরিক অভুত্থ্যনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে নিজেদের সীমা অতিক্রম না করারও হুশিয়ারী জানিয়ে যাচ্ছেন।
মুহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহ খাঁন (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
আরো পড়ুন;
দিদিয়ের দ্রগবাঃ যার এক কথায় থেমে গিয়েছিল যুদ্ধ-https://cutt.ly/qxsP8Axhttps://cutt.ly/
টেসলা কিভাবে বিশ্ব কাপাচ্ছেঃhttps://cutt.ly/8clWsYB