বঙ্গোপসাগরের তলদেশে ১শ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সম্ভাব্য মজুদ

বঙ্গোপসাগরের তলদেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের বিশাল মজুদের সন্ধান পেয়েছে বিজ্ঞানীরা, যা দিয়ে অন্তত ১শ বছর চলতে পারবে বাংলাদেশ।
গত ২৮ মার্চ ২০২১ সালে, কক্সবাজারের পেঁচারদ্বীপ এলাকায় বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত ‘সুনীল অর্থনীতির উন্নয়নে সমুদ্র সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক সেমিনারে, সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের ভূতাত্ত্বিক ওশানোগ্রাফি বিভাগের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া এই চাঞ্চল্যকর তথ্যটি প্রকাশ করেন।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গোপসাগরে যেসব বিরল খনিজ পদার্থ রয়েছে তার মধ্যে পারমাণবিক চুল্লির জ্বালানি ও নিরাপত্তাকাজে ব্যবহৃত খনিজও রয়েছে। আর এসব খনিজ উত্তোলন করে আমরা ব্লু-ইকনোমি বা সুনীল অর্থনীতিতে নতুন দুয়ার খুলতে পারি।
এই সেমিনারে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৯-২০ অর্থবছরের গবেষণা ফলাফলসহ মোট সাতটি প্রবন্ধ উত্থাপন করা হয়। যেখানে তারা বঙ্গোপসাগরের তলদেশে থাকা বিরল খনিজ সম্পদের ভূতাত্ত্বিক জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন। সেমিনারে জানানো হয়, বঙ্গোপসাগরের তলদেশে তিন হাজার ১০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মোনাজাইট, জিরকন, রুটাইল, ক্যালসিয়াম কার্বনেট, ফসরাস, সালফেট ও রেয়ার আর্থ এলিমেন্টসহ মূল্যবান খনিজ পদার্থের ভাণ্ডার পাওয়া গেছে। এছাড়া সাগরের তলদেশে সম্ভাব্য ১শ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ পাওয়া গেছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই গ্যাসে দেশের আগামী ১শ বছরের চাহিদা মিটানো সম্ভব হবে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশে গ্যাসের সংকট দিনে দিনে প্রবল আকার ধারণ করছে। সংকট মোকাবেলায় সরকার এরই মধ্যে বিদেশ থেকে গ্যাস আমদানি শুরু করেছে।
সেমিনারের বক্তাদের মতে, বর্তমানে দেশে মাত্র ১৪ বছরের গ্যাস মজুদ রয়েছে।
যদিও ২০১৮ সালের জুলাই মাসে, বিদ্যুৎ, জ্বালানী এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সংসদে তথ্য দিয়েছেন, উত্তোলন যোগ্য নিট গ্যাস মজুদের পরিমাণ ১২.৫৪ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। এই হিসেব আরো ৩ বছর আগের কথা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক বদরুল ইমাম এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে গ্যাসের মজুদ ১২ টিসিএফ ছিলো। সে হিসেবে ১২ বছর চলার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এই পরিমাণ গ্যাস দিয়ে ১০ বছরের বেশি চলা সম্ভব না বলে মনে করেন অনেক জ্বালানী বিশেষজ্ঞ।
এ প্রসঙ্গে সেমিনারে বক্তারা মন্তব্য করেন, আমাদের দেশের সমুদ্র সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে সুনীল অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটাতে হলে শুধু প্রযুক্তি উদ্ভাবন করলেই হবে না, সেই প্রযুক্তিকে মাঠ পর্যায়ে কাজে লাগাতে হবে। তবেই জাতি উপকৃত হবে।
এখন এই তথ্য আবিস্কারের পর মাঠ পর্যায়ে কত টা সফলতা আসে, সেটাই দেখার অপেক্ষা।
লেখক- সায়মা আফরোজ (নিয়মিত কন্ট্রিবিউটর AFB Daily)
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়