চা বিক্রি করে কোটিপতি পরীক্ষায় ফেল করা যুবক

দেশটির নাম ভারত। যেখানে প্রতিবছরই কয়েক হাজার ছেলেমেয়ে দেশটির প্রথম সারির কোন এক বিজনেস স্কুলে ভর্তির প্রয়াসে “ক্যাট” নামক এক ভর্তিযুদ্ধে নামেন। প্রফুল বিল্লোরে নামক এক সাধাদিধে ছেলেও এ “ক্যাট” নামক ভর্তি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। প্রাণান্তকর চেষ্টার পরও বারংবার ব্যার্থতার দরজাই দেখেছেন এ মানুষটি।

২০১৪ সাল পর্যন্ত জীবনকে যেন “ক্যাটের” কাছেই বন্ধক দিয়ে দিয়েছিলেন প্রফুল। দিনরাত টানা পড়াশোনার পরও সাফল্যের মুখ না দেখা প্রফুল মানসিক ভাবে হয়ে পড়েছিলেন চরম বিশাদগ্রস্থ ৷ জীবনের প্রতি কোনরূপ আগ্রহই হারিয়ে ফেলা প্রফুল সিদ্ধান্ত নেন নিজেকে কিছুটা সময় দেয়ার। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে দেশের নানা শহরে ঘুরে বেরাতে শুরু করেন প্রফুল বিল্লোরে। কিন্তু কত দিনই বা এভাবে আর চলতে পারে? বাড়িতে বাবাকে জানানোর সাহস না থাকলেও ঠিকই মনে মনে তদ্দিনে এমবিএ করার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন এ যুবক।
শেষে আহমেদাবাদেই নিজের কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন প্রফুল্ল বিল্লোরে নামক এ যুবকটি । প্রথম দিকে ম্যাকডোনাল্ডের আউটলেটে ইন্টারভিউ দিয়ে সেখানেই কাজ শুরু করেন প্রফুল্ল। মূলত সারাদিন ঝারুই দিতেন সেখানে। মাঝেমধ্যে কাস্টমারদের থেকে অর্ডার নেয়া কিংবা খাবার পরিবেশনের কাজটুকুও করতেন। এভাবে উপার্জন করতে পারলেও মনের শান্তি পাচ্ছিলেন না তিনি। জীবন নিয়ে তার আক্ষেপ ক্রমেই বাড়ছিল। এক পর্যায়ে নিজের কিছু করার চিন্তা থেকেই চা বিক্রির আইডিয়া মাথায় আসে প্রফুল্লের।

আহমেদাবাদের কোন এক এমবিএ কলেজে ভর্তির জন্য বাবার কাছ থেকে আট হাজার টাকাও জুটিয়ে নেন প্রফুল্ল। ওই টাকাতেই চা বিক্রির কাপ,কেটলি থেকে শুরু করে সকল ধরণের কাঁচামাল ক্রয় করে পরদিন থেকেই আহমেদাবাদের রাস্তায় চা বিক্রি করতে শুরু করেন প্রফুল্ল।
প্রফুল্লর ভাষ্যমতে প্রথম দিন কোন ক্রেতাই পাননি তিনি। পরদিন ফের রাস্তায় দোকান দেন। এবার গ্রাহকের কাছে নিজে গিয়ে অর্ডার নেয়া এবং অর্ডার পৌছে দেয়া শুরু করলেন তিনি। খোশমেজাজি, ইংরেজি ভাষী এ চা বিক্রেতাকে আশপাশের মানুষজন বেশ পছন্দ করতে লাগলেন। প্রথমদিন পাঁচ জন, দ্বিতীয় দিন ত্রিশ জন, তৃতীয় দিন দেড়শ জন এভাবে ক্রমেই বাড়তে থাকে প্রফুল্ল’র ক্রেতার সংখ্যা। দু’সপ্তাহর মাঝেই প্রফুল্ল’র ব্যবসা এতটাই ফুলে ফেঁপে উঠে যা চক্ষুশুলে পরিণত হয় আশপাশের চা বিক্রেতাদের। জোর করে প্রফুল্লের চা’র দোকান সেখান থেকে তুলে দেয়া হয়। পরের কয়েক সপ্তাহ আর দোকান দেয়ার সুযোগ হয় নি প্রফুল্লের। এ সময়টাতে তার গ্রাহকরাই তাকে খুজতে শুরু করে। ফেইসবুক,ইন্সটাগ্রামে তার সাথে যোগাযোগ করতে শুরু করেন অনেকে।

এবার ফের হার না মানা এক যোদ্ধার ন্যায় চায়ের কেটলি নিয়ে আহমেদাবাদের কোন এক হাসপাতালের ভেতর চা বিক্রি করা শুরু করেন প্রফুল বিল্লোরে। মাসে হাজারখানেক টাকা সেখানটায় ভাড়াও দিতেন তিনি।ধীরে ধীরে বড় হতে শুরু করে প্রফুল্লের ব্যবসা এবং একইসাথে গ্রাহকদের সাথে তার সখ্যতা। প্রফুল্ল শুধু চা’ই বেচতেন না গ্রাহকদের সাথে নিত্য নতুন ভাবনা নিয়ে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টাও করে যেতেন।

মাঝে ব্যবসা বাড়ানোর জন্য বাবার কাছ থেকে এমবিএ কলেজের নামে ৫০ হাজার টাকাও নেন প্রফুল্ল। বাবার সন্দেহ এড়িয়ে চলতে কোন এক এমবিএ কলেজে ভর্তিও হয়ে নিয়েছিলেন তিনি। ভর্তি হলেও কালেভদ্রেই সে কলেজে পা রাখতেন প্রফুল্ল। ব্যবসা বাড়ার সাথে সাথে প্রফুল্ল নিজের দোকানের নাম রাখলেন “এমবিএ চাওয়ালা”। যার পুরো মানে মিস্টার বিল্লোরে আহমেদাবাদ। চায়ের দোকান এবং নামের আগে জুড়ে দিয়েছিলেন মিস্টার শব্দটি।
কিন্তু অনেকেই বুঝতে পারতেন না এ নামের আসল মর্মার্থ। ভাবতেন এমবিএ করা ছেলে বুঝি চা বিক্রি করছে! এসব নিয়ে জুড়ে যেত হাসি-ঠাট্রা কিংবা নানা গল্প। তাতে ব্যবসায় লাভ বই ক্ষতি হয় নি মিস্টার বিল্লোরে চাওয়ালার।
আহমেদাবাদেই যে চাওয়ালার আজ ৩০০ বর্গফুটের দোকান রয়েছে। যেখানে বিশোর্ধ কর্মচারী রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছেন।
সেরা কোন বিজনেস স্কুলে না চান্স পেয়েও মিস্টার প্রফুল্ল বিল্লোরে আজ কোটিপতি। ২০১৯-২০ মৌসুমেই যার ব্যবসায়িক বাৎসরিক টার্ণওভার ছিল ৩ কোটি টাকা। বিজনেস স্কুলের এন্ট্রান্স এক্সামে ফেল করা ছেলেটি অধ্যয়নের জন্য সেখানকার কোন বিদ্যালয়ে ঢোকার সুযোগ না পেলেও আইআইএম কিংবা হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের মত বিশ্বসেরা স্কুলগুলোতেই তাকে আজ বক্তব্য দেয়ার জন্য প্রতিনিয়ত আমন্ত্রণ জানানো হয়।

এক সময় জীবনের কাছে প্রায় অতিষ্ঠ হয়ে যাওয়া ছেলেটিই শত বাধা-বিপত্তির পরও হার না মেনে নিজ লক্ষ্যে অবিচল থাকার কারণেই সফল হতে পেরেছেন আজকে।
মুহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহ খাঁন (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
আরো পড়ুন ;
সুলতান মাহমুদের সোমনাথ অভিযানের কারণ;https://cutt.ly/yl0sZbT
সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজের জীবনীঃ- https://cutt.ly/IlFHam1