আল্লামা মামুনুল হকের জীবনী

আল্লামা মামুনুল হক। একজন বাংলাদেশি ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক, অধ্যাপক ও সমাজ সংস্কারক। একজন ইসলামি ব্যক্তিত্ব হিসেবে তিনি দেশব্যাপী নাস্তিক, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী ও ইসলাম বিদ্বেষীদের বিরুদ্ধে কঠোর বক্তব্য দিয়ে বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছেন। সম্প্রতি কয়েকটি ইস্যু নিয়ে কথা বলে আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হয়েছেন মামুনুল হক।
১৯৭৩ সালের নভেম্বরে ঢাকার আজিমপুরের সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্মলাভ করেন মামুনুল হক।
তাঁর পূর্বপুরুষগণও ইসলাম ধর্মের বড় বড় পন্ডিত ছিলেন বিধায় মামুনুল হক আজকে এ পর্যায়ে। তাঁর বাবা ছিলেন স্বনামধন্য আলেমেদ্বীন, শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক। তিনিই ১ম বিখ্যাত হাদিসশাস্ত্র বুখারীর বাংলা অনুবাদ করেছিলেন। পূর্বপুরুষদের আদর্শ বুকে লালন করেই বড় হয়েছেন আল্লামা মামুনুল হক।
মামুনুল হকের শিক্ষার হাতেখড়ি হয় তার পরিবারেই। বাবা আজিজুল হকের কাছেই বাল্যশিক্ষা অর্জন করেন তিনি। পরিবারের ইচ্ছে ছিল মামুনুল হককে কুরআনের হাফেজ বানাবেন।
সেজন্য ঢাকার লালবাগের চানতারা মসজিদ মাদ্রাসার হেফজ বিভাগে তাঁকে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে ১৯৮৫ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি হেফজ সম্পন্ন করেন। হেফজ শেষ করার পর তিনি ভর্তি হন লালবাগ ইসলামিয়া কওমী মাদ্রাসায়। সেখানে অল্প কিছুদিন অধ্যয়ন করে তিনি ভর্তি হন ঢাকার জামিয়া রহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায়। সেখান থেকে তিনি ১৯৯৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে প্রথম স্থান, ১৯৯৫ সালে স্নাতক শ্রেণিতে তৃতীয় স্থান এবং ১৯৯৬ সালে দাওরায়ে হাদীস পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। পরবর্তীতে তিনি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সমাপ্ত করেন।
সুদীর্ঘ শিক্ষাজীবন শেষে মামুনল হক পা দেন কর্মজীবনে। সর্বপ্রথম তিনি যোগদান করেন সিরাজগঞ্জের জামিয়া নিজামিয়া বেথুয়া মাদ্রাসায়। সেখানে ৫ বছর শিক্ষকতা করার পর মামুনুল হক চলে আসেন মিরপুর জামিউল উলুম মাদ্রাসায়। মিরপুরের ঐ মাদ্রাসায় খুব বেশিদিন থাকা হয়নি মামুনুল হকের। মাত্র ২ বছর পরই ২০০০ সালে তিনি ঢাকার জামিয়া রহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায় যোগদান করেন। তাঁর শিক্ষাজীবনের বেশিরভাগ সময় এখানেই কাটিয়েছেন তিনি। সুদীর্ঘ ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এ মাদ্রাসায় শায়খুল হাদিস হিসেবে দায়িত্বরত আছেন তিনি। কিছুদিন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের খণ্ডকালীন অধ্যাপকের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন তিনি। মামুনুল হক
মাহাদুত তারবিয়্যাতুল ইসলামিয়া নামে একটি উচ্চতর ইসলামি শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন।
মামুনুল হক ইসলামি অঙ্গনের পাশাপাশি রাজনৈতিক অঙ্গনেও বেশ আলোচিত। তিনি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস নামক একটি ইসলামি সংগঠনের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিবের পদটিও মামুনুল হকের দখলে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় বাবরি মসজিদ নামে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছেন এই ইসলামী ব্যক্তিত্ব।
ব্যক্তিগত জীবনে দুবার জেল খেটেছেন আল্লামা মামুনুল হক। ২০১৩ সালের মে মাসে ঢাকার শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনে নেতৃত্বের কারণে ১ম বারের মত জেলে যান তিনি। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে তাকে আবারও কারাগারে নেওয়া হয়।
সম্প্রতি সেসব ইস্যু নিয়ে আলোচনার তুঙ্গে আল্লামা মামুনুল হক তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ভাষ্কর্য ইস্যু। তিনি মনে করেন ভাষ্কর্য এবং মূর্তি একই জিনিস। কোন ব্যক্তি বা প্রাণীর ভাষ্কর্য নির্মানকে ইসলাম কোনভাবেই সমর্থন করে না। যদি সম্ভব হত বঙ্গবন্ধু, জিয়াসহ বাংলাদেশের সকল ভাষ্কর্য অপসারণ করতেন তিনি। এর জন্য প্রয়োজনে তিনি আবার শাপলা চত্বরে যাবেন। তাঁর এই মন্তব্যকে ঘিরে আওয়ামী লীগসহ নানা সংগঠনসমূহের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। মামুনুল হককে ইঙ্গিত করে শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল বলেন, “সাবধান হন, না হলে ঘাড় মটকাতে সময় লাগবে না।
ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামের একটি সংগঠন কর্তৃক ৭২ ঘন্টার মধ্যে তাকে গ্রেফতারের আলটিমেটাম দেওয়া হয়। তাঁর আপত্তিকর মন্তব্যের জের ধরে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকেও বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়। সেখানে তাঁকে জঙ্গী আখ্যা দেয়া হয়। ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় তাঁর লেজ কেটে বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কর্মীরা কয়েক ঘণ্টার জন্য রাস্তা অবরোধ করে রাখেন এবং মাঝখানে আগুন জ্বালিয়ে দেন। ফরিদপুর ৩ আসনের সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরী তাকে “খেলা হবে” বলে চ্যালেঞ্জ করেন এবং যুবলীগের সঙ্গে মাঠে নামতে বলেন। আরো অনেক সংগঠন ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন।
মামুনুল হকের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছিলো তন্মধ্যে আরেকটি হচ্ছে নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাথে তাঁর যোগসাজশ রয়েছে। এসব অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন এবং “ভিত্তিহীন” বলে আখ্যায়িত করেন।
রাজনীতি ও ধর্মীয় অঙ্গনের পাশাপাশি বিভিন্ন বই লিখেছেন আল্লামা মামুনুল হক। তার সম্পাদিত ও প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা মোট ১৪ টি। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়মিত নিবন্ধ লিখে থাকেন।
পারিবারিক জীবনে বিবাহিত আল্লামা মামুনুল হক। তাঁর স্ত্রীও একজন কুরআনে হাফেজা। মামুনুল হক তিন সন্তানের জনক।