একনজরে বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানা

পেশায় আইনজীবী ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক।
তিনি জাতীয় সংসদের ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনের মধ্যে সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২৮ মে “সংসদ সদস্য” পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। টেলিভিশন টকশোর পরিচিত মুখ ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা একাদশ জাতীয় সংসদের আগে আলোচনায় আসেন। তার নিজ নির্বাচনী আসনের (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২) মানুষের কাছেও সে সময় তেমন পরিচিতি না থাকলেও বিভিন্ন এলাকায় তার জ্বালাময়ী বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় দ্রুত পরিচিত মুখ হয়ে উঠেন তিনি।
জন্ম ও পারিবারিক জীবন
রুমিন ফারহানা ১৯৮১ সালের ১৯ আগস্ট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার ইসলামপুরে মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম অলি আহাদ, যিনি বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ ও স্বাধীনতা পুরস্কার বিজয়ী ভাষা সৈনিক ছিলেন এবং মায়ের নাম রাশিদা বেগম।
রুমিন পরিবার থেকেই রাজনৈতিক দীক্ষা পান। তার পিতা অলি আহাদ ভাষা আন্দোলনে ১৫৪ ধারা ভঙ্গের নায়ক। তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। যার ফলশ্রুতিতে তিনি স্বাধীনতা পুরস্কার পান। অলি আহাদ তার জীবনের দীর্ঘ ১৯ বছর তিনি কারাগারে কাটিয়েছেন। তার রাজনৈতিক জীবন কেটেছে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, মাওলানা ভাসানী ও শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে। তিনি আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। রুমিন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বাবার হাত ধরেই রাজনীতিতে আসেন।
শিক্ষা জীবন
রুমিন হলিক্রস স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিভাগে তার স্নাতক সম্পন্ন করেন এবং যুক্তরাজ্যের লিংকনস্ ইন থেকে ব্যারিস্টার ডিগ্রি অর্জন করেন।
কর্মজীবন
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য। তিনি আইন ও রাজনীতির পাশাপাশি বাংলাদেশী লেখক ও সাংবাদিক হিসেবে অধিক সুপরিচিত। তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের উচ্চ আদালত বিভাগের আইনজীবী। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক ইত্তেহাদ’ পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক।
রাজনৈতিক জীবন
রুমিন বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। ব্যারিস্টার হিসেবে বাংলাদেশের উচ্চ আদালতে আইনি পেশায় কাজ করেন। ২৮ মে ২০১৯ বাংলাদেশ জাতীয়তবাদী দল বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়ে সংরক্ষিত নারী আসন-৫০ নং আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রথম বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির একমাত্র নারী সদস্য হিসেবে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেন।
বিএনপির নেতাকর্মীদের মতে, যুক্তি দিয়ে কথা বলতে পটু হওয়ায় দলের অনেক নারী নেত্রীকে পেছনে ফেলে সংসদে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন রুমিন ফারহানা।
সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, তার ওপর যে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে তা তিনি নিষ্ঠা, সততার সাথে পালন করতে সচেষ্ট থাকবেন।
রাজনীতিতে আসার পিছনের গল্প
একজন ব্যারিস্টার হয়ে রাজনীতিতে আসার পিছনের কারণ জানতে চাইলে রুমিন ফারহানা জানান, তার বাবা একজন ভাষা সৈনিক ছিলেন এবং পাশাপাশি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একজন জননন্দিত নেতা ছিলেন। ১৯৭৩ সালে, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে গাভী মার্কায় ৪২ হাজার ভোট বেশী পেয়ে অগ্রগামী ছিলেন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগের প্রার্থী তাহের উদ্দিন ঠাকুর(সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী) নৌকা প্রতীক নিয়ে ৩৪ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। কিন্তু তৎকালীন সময়ে ক্ষমতাসীনরা হেলিকপ্টারের মাধ্যমে ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে ঢাকায় নিয়ে তাহের উদ্দিন ঠাকুরকে বিজয়ী ঘোষণা করেছিলেন। বাবার হারানো সেই আসনটি পুনরুদ্ধার করতেই তিনি মাঠে নেমেছেন। দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ জনতাকে সাথে নিয়ে মাঠে নেমেছেন এবং এখানেই স্থায়ী হতে পারবেন বলে তার দৃঢ় বিশ্বাস।
লেখক- সায়মা আফরোজ (নিয়মিত কন্ট্রিবিউটর AFB Daily)
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়