পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধ বিমান তৈরির দৌড়ে এবার উদীয়মান পরাশক্তি তুরস্ক

“যুদ্ধই জীবন,যুদ্ধই সার্বজনীন” হিটলারের এ অমর উক্তি ঠিক কতটা যৌক্তিকতা রাখে সে নিয়ে তর্ক হলেও যুদ্ধ যে অমর সত্য তা অস্বীকার করার উপায় নেই। যুদ্ধের প্রাচীনতম সমর বিশ্লেষক বিখ্যাত দ্য আর্ট অফ ওয়ারের লেখক “সান জু” র মতে যুদ্ধে যার হাতে আকাশ আছে সেই যুদ্ধের অধিপতি।
আধুনিক কালে পৃথিবীতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠারও অন্যতম নিয়ামক এ আকাশ! আকাশে শক্তিমত্তার উপরেই বর্তমান বিশ্বে বিশ্বমোড়ল প্রতিষ্ঠিত হয় । শক্তিমত্তা বাড়ানো কমানোর এ খেলায় সর্বশেষ ও সর্বাধুনিক সংযোজন পঞ্চম প্রজন্মের ফাইটার বিমান।
বেশ কিছু বিশ্ব মোড়লদের কাছে বেশ আগে থেকেই রয়েছে এ পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধ বিমান। মুসলিম দেশগুলো আজোকদি এসকল বিশ্ব মোড়লদের কাছ থেকেই তাদের চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করে গেছে। কিন্তু আর কত অন্যের পণ্যে ভরসা, বিশ্বে উদীয়মান পরাশক্তি তুরস্ক ঘোষণা দিয়েছে তাদের পঞ্চম প্রজন্মের ফাইটার জেট টিএফ-এক্স লঞ্চের। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে পঞ্চম প্রজন্মের অন্যতম ভয়ানক যুদ্ধবিমান এফ-৩৫ পাওয়ার কথা ছিল তুরস্কের, কিন্তু ডেলিভারির সময়েই দেখা দেয় বিপত্তি। তুরস্কের রাশিয়া থেকে কেনা এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের কারণে এফ-৩৫ ডেলিভারিতে বাধসাধে বিশ্ব মোড়ল আমেরিকা । যার পর অনেকটা কোমড় বেধেই নিজ সক্ষমতায় পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধ বিমানের তৈরির পিছনে পড়েছে তুরস্ক।

তুরস্কের পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধ বিমান বানানোর সাধ আজকের না। সে স্বপ্ন বুনা শুরু হয় সে ২০১১ সালেই৷ ১৩ সালে তুরস্কের বাজেটে এর জন্য বরাদ্দ রাখেন প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান। এদ্দিন এর কাজ ধীরগতিতে চললেও আমেরিকার এফ-৩৫ রপ্তানিতে বাধসাধাই যেন এ প্রকল্পে নতুন প্রাণ দিয়েছে।
তুরস্কের এ বিমানটি আকাশে তুরস্ককে নিয়ে যেতে পারে অন্য মাত্রার উচ্চতায় , এয়ার টু এয়ার এন্ড এয়ার টু সারফেস এটাকে সক্ষম হবে এ বায়ুযানটি। ১৯ মিটার দৈর্ঘ্য, ২৭২১৫ কেজি ওজন, ম্যাক-২ গতির এ যুদ্ধযানের ধরণ হবে স্টিলথ এয়ার সুপিরিয়রিটি। দু’ইঞ্জিন বিশিষ্ট এ যান পৃথিবীর যেকোন আবহাওয়াতেই শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে সক্ষম হবে। জটিল প্রকৌশল বিদ্যার মারপ্যাচের এ প্রকল্প তূর্কি ইঞ্জিনিয়ারস দের সাথে পরামর্শক হিসেবে ব্রিটেনের এরোস্পেস কোম্পানি বিএই সিস্টেমস ১২৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর করার মাধ্যমে নিজেদের করে নিয়েছে , কোম্পানিটি ইউরোপের বিভিন্ন দেশের যুদ্ধ বিমান নির্মানের সাথে জড়িত। এদিকে ডিফেন্স এনালিস্টদের মতে এ বিমানের ইঞ্জিন নির্মানের দায়িত্ব পেতে পারে তুরস্কের বিভিন্ন এটাক হেলিকপ্টারের ইঞ্জিন সরবরাহকারী ও পৃথিবীব্যাপি বিখ্যাত “রোলস রয়েস” প্রতিষ্ঠান।
তুরস্ক তাদের এ পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধ বিমানের প্রকল্পে বাজেট রেখেছে ৫০ বিলিয়ন ডলার,ইউনিট খরচ ধরা হয়েছে ১০০ মিলিয়ন ডলার । যে প্রকল্পে ইতিমধ্যেই যোগ দিয়েছে মুসলিম বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক ভাবে শক্তিশালী রাষ্ট্র মালেয়শিয়া। ধারণা করা হচ্ছে কিছুদিনের মধ্যেই এ দু’রাষ্ট্রের মাঝে সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষরিত হবে। ধারণা করা হচ্ছে এ প্রকল্পে পাকিস্তান, কাজাখাস্তান,ইন্দোনেশিয়ার মত দেশগুলোকেও আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে। তুর্কি ডিফেন্স এনালিস্টদের আশানুযায়ী এ বিমান ২০২৭-২৮ সালেএ মাঝে সার্ভিসে আসবে। তুরস্ক ছাড়াও পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধ বিমানের উপর কাজ করছে পাকিস্তান প্রজেক্ট আজম নামে। এছাড়াও ভারত,জাপানের মত দেশগুলোও এ ধরনের এডভান্স ফাইটার জেট নির্মানের চেষ্টায় রয়েছে।
মুহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহ খাঁন (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
আরো পড়ুন ;
মোঙ্গলদের পতনের ইতিহাস ; https://cutt.ly/7jV9UIE
Ak-47 কেন এত জনপ্রিয়? – https://cutt.ly/sjIERON