১৫৪ বার ‘ধুম থ্রি’ দেখে ব্যাংক ডাকাতি করতে যাওয়া বাংলার বিস্ময় বালক

আচ্ছা কখনো কি শুনেছেন বয়সে ১৬ কোন বাঙালি বালক নিউক্লিয়ার সাইন্স নিয়ে থিসিস পেপার লিখছে! শুনেছেন কি কখনো এ বয়সী কোন পুঁচকে ব্যাংক ডাকাতি করার চেষ্টা করেছে! এবং তা করতে যেয়ে এমন এমন ট্রিক্স খাটিয়েছে যা কিনা বাংলার বাঘা বাঘা তদন্ত অফিসারদের গলদঘর্ম অবস্থা করেছে, শুনেছেন কি এমন কোন বালকের কথা যার কর্মকান্ডের ফিরিস্তি শুনে কোর্টরুমে অবস্থানকারীদের পিলেও ক্ষণে ক্ষণে চমকে উঠেছে ! আজকে আমরা শুনব এরকমি এক বালকের বিস্ময়কর সব কর্মকান্ডের কথা!
ছেলেটি বাসিন্দা বগুড়ার। বাবা বগুড়ার নিউ মার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী। ছেলে কিছুদিন পরেই বগুড়ার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এস.এস.সি পরীক্ষায় বসার কথা। স্কাউটিং,বিএনসিসি, বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দারুণ দক্ষ এ ছেলেটি ২০১৯ সালে স্কাউটিং এ পায় প্রেসিডেন্টস এওয়ার্ড এবং পায় রাজশাহী বিভাগের সেরা স্কাউটের খেতাব। অত্যাধুনিক ভিএফেএক্সে তৈরি আমির খান অভিনীত “ধুম থ্রি” ছবিটি কেন যেন ছেলেটি বারবার দেখে। ছবিতে ব্যবহৃত ব্যাংক ডাকাতিতে করা কৌশল গুলো তার মনে জাগায় এডভেঞ্চারের শখ৷ ছবিটি নাকি সে দেখেছে ১৫৪ বার!

বড়বোনের বিয়ে হয় বগুড়ার গাবতলীতে। বারবার যাওয়া আসার পথে সেখানকার ব্যাংকেও ধুম থ্রি ছবির ন্যায় ডাকাতি করার শখ জাগে বিস্ময়কর এ ছেলেটির! ধুম থ্রি ছবিতে আমির খান এক বিশেষ ধরণের ই-বাইক এর মাধ্যমে মাটিতে ও পানিতে সমান ভাবে চলতে পারে তার মাধ্যমে ব্যাংকে ডাকাতি করে দেখান।
ডার্ক ওয়েবে অবাধ বিচরণ থাকা এ ছেলে নিউক্লিয়ার সাইন্সের উপর বাতিক থাকায় এ বিষয়ে পড়াশুনা শুরু করে। শিখে নেয় রাশিয়ান ভাষা, ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমেই অর্ডার করে নিউক্লিয়ার সাইন্সের নানা নিষিদ্ধ বই । জমা দিতে থাকে এ বিষয়ের উপর লেখা নানা আর্টিকেল। নিউক্লিয়ার বোমার উপর তার লেখা ২৩ পাতার এক আর্টিকেল জমা দিয়ে সে আয় করে প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ টাকা। এসকল টাকাই সে তার মায়ের ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে উত্তোলন করে নেয় । যে টাকাগুলোকে সে ব্যাবহার করে তার এডভেঞ্চারাস কাজ গুলো পূরণের নিমিত্তে। চীন থেকে অর্ডার করে ই-বাইক, অত্যাধুনিক সার্ভেইল্যান্স টুলস যদিও বাংলাদেশ কাস্টমসের বিধিনিষেধের দরুন কাস্টমসেই আটকে যায় পণ্যগুলো। তবে সে বিভিন্নভাবে সংগ্রহ করে অত্যাধুনিক সার্ভেইল্যান্স টুলস, নাইফ,ভেস্ট যা পুলিশের বিশেষ বাহিনীর সদস্য বা বাংলাদেশ আর্মি ব্যবহার করে থাকে ।

৫ জানুয়ারী নিজের তৈরি নাইট্রোজেন সলিউশন নিক্ষেপ ও ছুরিকাঘাত করে বগুড়ার রূপালী ব্যাংক শাখায় ডাকাতির চেষ্টা করে এই বালক। মুখোশ পরা অবস্থায় তার ছোড়া দাহ্য পদার্থে ক্ষতবিক্ষত করে দুই আনসার কর্মকর্তাকে । ওই দিন ভোরে সে রুফটপ গ্লাভস ব্যবহার করে যা ব্যবহার করলে স্পাইডারম্যানের মত দেয়ালে মই ব্যাবহার করতে হয় না তা পড়ে ব্যাংকে ঢুকে , সিড়িঘড়ের তালা কেটে ভেতরে ঢোকে এ বালক। শেষে ব্যাংকের ভোল্ট ভাংতে ব্যার্থ হয় এ বালক।
পুলিশের মতে একজন পেশাদার অপরাধীর চেয়েও চতুরতা বেশি ছিল এ বিস্ময় বালকের। পিঠে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে ডাকাতিতে ব্যার্থ হয় সে। পরে পালিয়ে সে বগুড়ার এক বন্ধুর বাসায় আশ্রয় নেয়, ছদ্মনামে চিকিৎসা নেয় বগুড়া মেডিকেল কলেজ থেকে, সেখান থেকেও কিছুদিন পর পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নেয় গাজীপুরের টঙ্গীতে তার চাচার বাসায়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলী হায়দার চৌধুরীর নেতৃত্বে গাবতলী থানার পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন ১৮ দিন চেষ্টার পর গাজীপুরের টঙ্গীর চাচার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেন এ বালককে ,যখন সে গোপনে ই-পাসপোর্ট করে ভারতে পলায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

গ্রেফতারের পরই বগুড়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করা হয় এ বালককে। যেখানে ‘১৬৪’ ধারায় জবানবন্দী দেওয়ার সময় প্রতি মূহুর্তে শিহরিত হচ্ছিলেন সেখানে উপস্থিত মানুষজন। তার জবানবন্দি থেকে জানা যায় ডার্ক ওয়েবে ডার্ক হোর্স নামে পরিচিত এ হ্যাকার ইতিমধ্যেই নিশানা বানিয়েছিলেন বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি এক সিম কোম্পানিকে। যাদের মেইন সার্ভার হ্যাক করার কারণে প্রায় আট ঘন্টা অচলাবস্থায় ছিল সে সিম কোম্পানিটি। মাত্র ত্রিশ মিনিটের মধ্যেই এসির কনভার্টার রিম দিয়ে তৈরি করতে পারে বিপজ্জনক দোলনা বন্দুক। একই সময়ে তৈরি করতে পারে এসির কম্প্রেশার দিয়ে চেতনানাশক গ্যাস।
পুলিশের সুপারের মতে ; ছেলেটির কীর্তিতে সত্যিই তারা অবাক এত কম বয়সে তার এত জটিল অপরাধ পরিকল্পনা, ভাবাই যায় না। ছেলেটি যদি তার কোন এক মেয়ে বন্ধুর সাথে রাতের কিছুটা সময় কথা না বলত তাহলে নাকি তাকে ধরাও প্রায় অসম্ভব ছিল। এই এক ক্ষুদ্র ভুলের কারণেই ধরা পড়ে যায় এ বিস্ময় বালক।
আঠারো বছরের কম বয়স হওয়ায় তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কিশোর সংশোধানাগারে। বাবার মতে ছেলে মেধাবী হলেও বখে গিয়েছে, শুনে না তাদের কথা।
এতটা মেধাবী এ বালক অনাগত ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সম্পদ হবে নাকি বোঝা হবে তা ভবিষ্যতের সময়েই বলে দিবে।
এতটা মেধাবী এ বালক অনাগত ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সম্পদ হবে নাকি বোঝা হবে তা ভবিষ্যতের সময়েই বলে দিবে।
মুহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহ খাঁন(ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
আরো পড়ুন; ভুলে যাওয়া ঢাবির কারিগর- https://cutt.ly/