৩৫০০০ একরের মিরসরাই ইকনোমিক জোনঃএশিয়াকে তাক লাগানো এক মহাকর্মযজ্ঞ

মিরসরাই ইকোনমিক জোন। নানা পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশন, সোশাল মিডিয়ার সংস্পর্শের দরুন বাঙালি সমাজ ইতিমধ্যেই দুয়োধবনি শুনতে শুরু করেছে যে বাংলাদেশের মত ছোটখাটো একটি দেশেই নাকি হতে যাচ্ছে এশিয়ার সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল!
অর্থনীতির পরিভাষায়, ইকোনমিক জোন বলা হয় এমন একটি বিশেষায়িত অঞ্চলকে যেটি সে দেশের সরকার বিশেষভাবে শিল্পায়নের জন্য তৈরি করে থাকে। যেটিতে সরকার সকল ধরণের বিশ্বমানের সুযোগ সুবিধা যেমন ট্রান্সপোর্টেশন,ইলেক্ট্রিসিটি, পোর্ট,গ্যাস সহ নানাকিছু প্রদান করে থাকে। যাতে বিদেশী কোম্পানিগুলো এ নির্দিষ্ট জায়গায় বিনিয়োগে আকৃষ্ট হয়।
বাংলাদেশে বিনিয়োগ আকৃষ্টকরণ চেষ্টারই ফল স্বরূপ বাংলাদেশ সরকার দেশব্যাপী নানা ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলেও সত্য এশিয়ার সর্ববৃহৎ ইকোনমিক জোনের মালিক হতে যাওয়া বাংলাদেশ ২০০৯ সাল পর্যন্ত কোন ধরণের ইকোনমিক জোনের পরিকল্পনাই করে নি।

২০১০ সালের ৩১ ডিসেম্বর মহামায়া সেচ প্রকল্প উদ্বোধন করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মিরসরাইয়ে আসলে সেখানে মিরসরাইয়ের সংসদ সদস্য সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন তাকে ইছাখালী চর হেলিকপ্টারে ঘুরিয়ে দেখান এবং সে অঞ্চলকে বিনিয়োগের উপযোগী করে গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা জানান। সকল পরিকল্পনার রূপ রেখা দাড় করানোর পর ২০১২ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ অঞ্চলকে ইকোনমিক জোন বানানোর সিদ্ধান্ত দেন।
সাগরের বুক চিরে জেগে উঠা চর যা কিনা কিছুদিন আগেও জোয়ারের সময় ৭-৮ মিটার পানিতে তলিয়ে থাকত ট্রাকের পর ট্রাক বালু ফেলে প্রতিনিয়ত তাকে যেন প্রস্তুত করা হচ্ছে মহা কর্মযজ্ঞের জন্য।

আয়তনে এটি এতটাই বড় যে দেশের তিনটি জেলা চট্টগ্রাম, ফেনী,নোয়াখালী পর্যন্ত ছুয়ে গিয়েছে। বর্তমানে এটি ৩০০০০ হাজার একরের উপরেই গড়ে তোলা হলেও ২০৩০ সাল নাগাদ যোগ হবে আরো ৫০০০ একর জমি। যখন প্রকল্পটির আয়তন গিয়ে দাড়াবে ৩৫০০০ হাজার একরে যেটি আয়তনে সিঙ্গাপুরের এক পঞ্চমাংশের সমান । দেশের তৃতীয় বৃহত্তম সিটি কর্পোরেশন কুমিল্লার দ্বিগুণেরো বেশি। আশ্চর্যজনক বিষয় হলেও সত্যি এত বড় শিল্প নগরী গড়ে তুলতে বাংলাদেশ সরকারকে করতে হয়নি এক ইঞ্চি জায়গাও অধিগ্রহণ। সাগর থেকে জেগে উঠা চর ও কেওড়া বন কে রাতারাতি অর্থনৈতিক অঞ্চলে রূপান্তরিত করে রীতিমতো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ।
ভৌগলিক কৌশলগত দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ জায়গা যার পাশেই ভারত, মিয়ানমারের মত দেশ। বঙ্গোপসাগর এর কোল ঘেষে হওয়ায় সরাসরি নৌ পরিবহনের সাথে সম্পৃক্ত, চট্টগ্রাম পোর্ট থেকে মাত্র ৬৭ কিমি দূরে এবং সম্প্রতি চলমান প্রজেক্ট মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরও খুবই কাছে,এছাড়াও পৃথিবীর অন্যান্য যেকোন দেশ থেকে কম খরচে ও অধিক কর্মঠ লেবারের সহজলভ্যতার কারণে বিনিয়োগ কারীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন মিরসরাই ইকোনমিক জোনে।
ইতিমধ্যেই সাড়ে সাত হাজার একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে একশটিরো বেশি কোম্পানিকে । এসেছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ইনভেস্টমেন্ট। বিনিয়োগ কারী প্রতিষ্ঠান গুলোর অন্যতম জাপানের হোন্ডা মটরস কর্পোরেশন, দক্ষিণ কোরিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম কোম্পানি sk গ্যাস, জাপানের নিপ্পন স্টিল, ভারতের আদানি, সিঙ্গাপুরের ওয়েলমার,বিশ্বের সবচেয়ে বড় রং উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বার্জার পেইন্টস এছাড়াও দেশীয় কোম্পানির মধ্যে রয়েছে সামিট চিটাগং পাওয়ার, বসুন্ধরা গ্রুপ, পিএইচপি গ্রুপ, অনন্ত গ্রুপ, আরব-বাংলাদেশ ফুড ইত্যাদি। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান উৎপাদনো শুরু করে দিয়েছে। বেজা কর্তৃপক্ষের গবেষণা মতে আশা করা হচ্ছে ২০২৫ সালের মধ্যেই প্রকল্পটিতে কর্মসংস্থান হবে ১০ লক্ষাধিক মানুষের ৩০ সালের মধ্যে যার সংখ্যা দাড়াবে ৩০ লাখে। কর্তৃপক্ষের আশা আগামী দু’দশকে মিরসরাই ইকোনমিক জোন কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের জায়গা হয়ে উঠবে।

এত এত শিল্প প্রতিষ্ঠানের নাম শুনে আবার এটা ভাবতে যাবেন না যেন এ বিশাল এলাকা জুড়ে শুধু কল কারখানাই থাকবে। মিরসরাই ইকোনমিক জোনের মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী এখানে গড়ে তোলা হচ্ছে নিজস্ব নৌ বন্দর, বৈদ্যুতিক পাওয়ার প্লান্ট, পরিকল্পিত আবাসন প্রকল্প, নির্দিষ্ট সংখ্যক স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়,পুলিশ স্টেশন, ফায়ার সার্ভিস,হাসপাতাল,ব্যাংক সহ আরো বহু স্থাপনা।

পরিবেশের ক্ষতি যেন না হয় সেকারণে প্রকল্প শুরুর আগেই বুয়েটের একটি টিম দ্বারা করানো হয়েছিল ফিজিবিলিটি স্টাডি। এছাড়াও পুরো প্রকল্পের ডিজাইন সবচেয়ে বেশি পরিবেশবান্ধব করে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রকল্পটির ঠিক মাঝামাঝি বরাবর গড়ে তোলা হচ্ছে ২০০ একর জায়গা ঘিরে শেখ হাসিনা সরোবর যেখানে নান্দনিক একটি লেকের পাশাপাশি জায়গাটিকে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবেও গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।
মাইলের পর মাইল বিস্তৃত বালুঘেরা অঞ্চল দেখে বুঝার দায় নেই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কি বিরাট পরিমাণ প্রভাব রাখতে যাচ্ছে অঞ্চলটি। অঞ্চলটির মাধ্যমেই বাংলাদেশ আস্তে আস্তে প্রবেশ করতে যাচ্ছে ভারী শিল্পের দিকে।

ফরেন পলিসি অনুসারে ভবিষ্যৎ দিনগুলোতে ‘ইকোনমিক ডিপ্লোম্যাসির’ পথে হাঁটা বাংলাদেশকে ইতিমধ্যেই গবেষকরা আখ্যা দিচ্ছেন এশিয়ান টাইগার নামে। যার অন্যতম ভবিষ্যৎ সূতিকাগার হতে যাচ্ছে এই মিরসরাই ইকোনমিক জোন।
এ যেন পৃথিবীকে বুক চিতিয়ে আভাস দেওয়ার নামান্তর, বাংলাদেশ আসছে। আর নয় তলাবিহীন পিছিয়ে পড়া জাতি, বিশ্ব অর্থনীতিতে নিজেদের পদচিহ্ন রাখতেই যেন গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসছে বাঙালি জাতি।
মাশাআল্লাহ! বাংলাদেশ আসছে😍
ধন্যবাদ পাশেই থাকুন।
ইনশাআল্লাহ অদূর ভবিষ্যতে বিশ্ব মানচিত্রে মাথা উচুঁ করে দাড়াবে প্রিয় মাতৃভূমি। লাল সবুজের এই পতাকা জানান দিবে তাঁর স্বমহিমা।
ইনশাল্লাহ অচিরেই এমনটা হবে।