কে এই ভন্ড দেওয়ানবাগী?কিভাবে হলো তার উত্থান!

সদ্য প্রয়াত হলেন বাংলাদেশ সহ নানা দেশে ‘দেওয়ানবাগী’ নামে পরিচিত দেওয়ানবাগের পীর। দেওয়ানবাগের পীর সম্পর্কে দেশে-বিদেশে নানা সময় রটেছে নানা কথা হয়েছে বহু আলাপ-আলোচনা। কে সঠিক কে ভুল সেটি ভিন্ন আলোচনা হলেও বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ইসলামী সংস্থা “ইসলামী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ” তার সম্পর্কে যে স্টেটমেন্ট ফতোয়া দিয়েছে তা সত্যিই গুরুত্ববহ।
ইসলামী ফাউন্ডেশন বলে;
দেওয়ানবাগের পীর নিতান্তই গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট। ধর্মীয় দীক্ষা গ্রহণ ত দূরের কথা , এর সাহায্য সহযোগিতা করা, সান্নিধ্যে উঠা-বসা বরং তাঁর সাথে কোন রকম সংশ্রব রাখা হারাম। আর তাঁর অপপ্রচার প্রতিহত করা প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য।
(১৭৬৭ ইসঃফাঃ সং ও দাওয়াহ/৩/৮৭/ ৫১২২ তাং ৫/৯/৯১ ইং। )
দেওয়ানবাগীর পীর নামে পরিচিত ব্যাক্তিটিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ইসলামী নিয়ন্তা সংস্থা কেন দিল এ ধরণের ফতোয়া? কিইবা করেছেন এ ব্যাক্তি? কি তার পরিচয়? কিভাবেই বা হলো তার উত্থান?
আজ আমরা খোজার চেষ্টা করব এ সকল প্রশ্নেরি উত্তর।
দেওয়ানবাগীর পীরকে সকলে দেওয়ানবাগী নামে চিনলেও এ ব্যাক্তির আসল নাম সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা। ১৯৪৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামে সৈয়দ আবদুর রশিদ সরদার ও সৈয়দা জোবেদা খাতুনের ঔরসে জন্ম গ্রহণ করেন সৈয়দ মাহবুবে-এ-খোদা। পরিবারে আরো পাঁচ ভাই দুই বোন থাকলেও তিনিই ছিলেন সর্ব কনিষ্ঠ।
নিজ এলাকা তালশহর কারিমিয়া আলিয়া মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পর্যন্ত পড়াশুনা করেই পড়ালেখার ইতি টানেন মাহবুব-এ-খোদা।
তার জীবনের উত্থান মূলত ফরিদপুরে চন্দ্রপাড়া দরবারের প্রতিষ্ঠাতা আবুল ফজল সুলতান আহমেদ চন্দ্রপুরীর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করার মাধ্যমে শুরু হয়। এরপর পীরের মেয়ে হামিদা বেগমকে বিয়ে করেন দেওয়ানবাগী। এরই সুবাদে শ্বশুরের কাছ থেকে খিলাফত লাভ করেন মাহবুবে-এ-খোদা। তার কিছুদিন পর নিজেই নারায়ণগঞ্জে দেওয়ানবাগ নামক স্থানে একটি আস্তানা গড়ে তোলেন এবং নিজেকে সুফি সম্রাট পরিচয় দিতে থাকেন মাহবুব-এ-খোদা। আস্তে আস্তে তার অনুসারী বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে মতিঝিলের ১৪৭ আরামবাগে স্থায়ী দরবার গড়ে কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকেন দেওয়ানবাগী।
সময়ে অসময়ে নানা কাজে-কর্মে-কথায় জন্ম দিয়েছেন নানা তর্ক বিতর্ক। হয়েছেন চরম বিদ্বেষের পাত্র।
তার কিছু উক্তি যেমন ;
*ময়লার স্তূপে অর্ধমৃত ও বিবস্ত্র অবস্থায় রাসুল (সাঃ) কে দেখেছি। (নাউযুবিল্লাহ)
* নিজেকে ইমাম মাহদীও দাবী করেন। অতঃপর দরুদে মাহদী রচনা করে্ন । দরুদে মাহদীঃ (নাউযুবিল্লাহ) “আল্লাহুম্মা ছাল্লী আ’লা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদিউ ওয়ালা আ’লা ইমাম মাহদী রাহমাতাল্লিল আলামীন ওয়ালিহী ওয়াছাল্লীম। ”
*,“জিব্রাইল বলতে আর কেও নন, স্বয়ং আল্লাহ-ই জিব্রাইল।”[নাউজুবিল্লাহ ]
*সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন “শুধু আমি নই, আমার স্ত্রী কন্যা সহ লক্ষ্য লক্ষ্য মুরিদানও আল্লাহকে দেখেছেন” –[সুত্রঃ সাপ্তাহিক দেওয়ানবাগ]
এছাড়াও তার শত সহশ্র উক্তি তাকে ইসলামী মহলে চরম ঘৃণার পাত্রে পরিণত করেছে। এতদসকল ইসলামের মূল ধারার সাথে চরম সাংঘর্ষিক অপব্যাখ্যার কারণেই ইসলামী ফাউন্ডেশন তাকে ভন্ড ফতোয়া প্রদান করে।

তার সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলাম শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ শফিকুর রহমান বলেন;
”উল্টা পাল্টা ফতোয়া দিয়ে তার উত্থান হয়েছে। ইসলামকে কাটছাট করেছেন তিনি। তিনি বেহেস্ত দিয়ে দেবেন, আল্লাহকে দেখেছেন, এসব বলে মানুষকে ধোঁকা দিয়েছেন। আসলে মানুষ তো অন্ধ ভক্ত। বাঙালিরা অনেকে বেশি হুজুগে নামছে। এই জন্য তার ভক্ত হয়েছে”।
এছাড়াও এনটিভির সর্বোচ্চ পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে ১০০০ কোটি টাকার মানহানি মামলা করেও তিনি আলোচনায় আসেন।
২০১৭ সালে তার মৃত্যুর তুমুল গুজব ছড়ায় যা নিয়েও তিনি ফের আলোচনায় এসেছিলেন। কয়েকবার তার ভক্তদের সঙ্গে অন্যদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
তার যৌবনকাল সম্পর্কে জানা যায় তিনি স্বাধীনতাযুদ্ধে ৩ নম্বর প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। যুদ্ধ শেষে তিনি সেনাবাহিনীর ১৬ বেঙ্গল রেজিমেন্টে রিলিজিয়াস টিচার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তিনি মোট ১১টি দরবার ও শতাধিক খানকাহ প্রতিষ্ঠা করেন।
অবশেষে সকল আলোচনা-সমালোচনা বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে গত ২৮ ডিসেম্বর সোমবার ভোর ৬টা ৪৮ মিনিটে মারা যান দেওয়ানবাগী পীর। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর।জানাজার পর বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। অসিয়ত অনুযায়ী তাকে তার স্ত্রীর পাশেই দাফন করা হয়।
মুহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহ খাঁন (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)