অবশেষে চলে গেলেন ৭০ বছর না খেয়ে থাকা ভারতীয় যোগী ! কে এই যোগী প্রহলাদ?

বার্ধক্যজনিত কারণে পরপারে পাড়ি জমালেন ভারতীয় যোগী প্রহলাদ জানি। যোগী প্রহলাদের দাবি, কোন রকম খাবার এবং পানি ছাড়াই তিনি ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বেঁচে আছেন। গত মঙ্গলবার হাসপাতালে নেয়ার পর মা’রা যান এই যোগী। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৯০ বছর।
প্রয়াত ভারতীয় যোগী প্রহলাদ জানির জন্ম ১৯২৯ সালের আগস্ট মাসে। জীবন কাটিয়েছেন ভারতের গুজরাটের চারাদা গ্রামে। মাতাজি বা চুনরিওয়ালা মাতাজি নামে সমধিক পরিচিত। আবার কেউ কেউ তাকে ডাকতেন পাওহারি বাবা বলে। যার অর্থ, পবন-আহারি বা বাতাস সেবনকারী।
১৮ বছর বয়সে যোগী প্রহলাদ মনস্থির করেন জীবনটা অন্যভাবে কাটাবেন। তখন থেকেই শুরু হয় তার যোগাসন ও বায়ুসাধনা।
সমগ্র গুজরাটেই ছিল যোগী প্রহলাদের অসম্ভব জনপ্রিয়তা।পুরো ভারতজুড়ে তার অসংখ্য ভক্ত ছিল। তিনি দাবি করতেন মা অম্বার কৃপাই নাকি তার অন্যতম প্রধান জীবনীশক্তি এবং ধ্যান করেই কাজের শক্তি পান তিনি।
চুনরিওয়ালা মাতাজী ওরুপে যোগী প্রহলাদের সাজ সজ্জা ও পোষাক আশাক ছিল বেশ স্বকীয় এবং আলাদা। পরনে লাল কাপড়। কপালে লাল টিপ।এক মুখ দাড়িগোঁফ। ভারী গয়নাও পরতে দেখা যেত তাকে। সবসময় ওড়না অর্থাৎ চুনরি ব্যাবহার করতেন বলে তিনি চুনরিওয়ালা মাতাজী নামে পরিচিত লাভ করেন।
যোগী প্রহলাদের ৭০ বছরের অধিক সময় না খেয়ে থাকার দাবিকে কার্যত অসম্ভব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। আমেরিকার হেনরিফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক পারিজাত সেন এটিকে ‘ভাঁওতাবাজি’ বলেই অভিহিত করেন।অধিকাংশ বিজ্ঞানীদের কথাতেই এই সাধকের দাবির কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
যোগী প্রহলাদের না খেয়ে থাকার দাবি যাচাই করতে বেশ কয়েকবার তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। যে সমস্ত বিখ্যাত বিজ্ঞানীরা তাঁকে নিয়ে গবেষণা করেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন ড. এপীজে আব্দুল কালাম।
তার দাবি ভুল প্রমাণ করার জন্য তার আশ্রমের গাছের ওপরও পরীক্ষা চালানো হয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞানী ও ডাক্তাররা কোনও সূত্রই খুঁজে পাননি। তার জীবন প্রণালী নিয়ে কোনও ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায়নি।
তাঁর আশ্রম নিয়েও বহু বিজ্ঞানী এবং ডাক্তার গবেষণা করেছেন, কিন্তু তাঁরাও নির্দিষ্ট করেকিছু বলতে পারেন নি।তাঁর জীবন-ধারণ সম্পর্কে কেউই নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে অক্ষম।
২০১০ সালে প্রহলাদ জৈনকে নিয়ে ডিফেন্স ইনস্টিটিউট অফ ফিজিওলজি এন্ড এলিয়েড সাইন্স এবং ডিফেন্স রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানিজেশান গবেষণা শুরু করেছিল, সেখানে ১৫ দিন ধরে ক্যামেরার সাহায্যে ক্রমাগত তাঁর সমস্ত গতিবিধির দিকে লক্ষ্য রাখা হয়েছিল। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর একটা সিদ্ধান্তেই আসা সম্ভব হয়েছে, যে তিনি সত্যিই কোনো রকম অন্ন বা জল গ্রহণ করেন না।
দূর-দূরান্ত থেকে লোকে তাঁর আশ্রমে আসেন তাঁকে দর্শন করার জন্য। তাঁর আশীর্বাদ গ্রহণের জন্য প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সহ বহু বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব তাঁর কাছে গেছেন।
যোগী প্রহলাদের মরদেহ গুজরাটের বনাসকণ্ঠ জেলার আমবাজি মন্দিরের নিকটে তাঁর আশ্রম-গুহায় রাখা হয়েছিল। ভক্তদের শেষ দর্শনের উদ্দেশ্যে দুদিন রাখার পর বৃহস্পতিবার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।