হারবাল চা দিয়ে করোনা চিকিৎসা করছে আফ্রিকা

আফ্রিকা জুড়ে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ভারত মহাসাগরের বৃহত্তম দ্বীপ এবং আফ্রিকার দেশ মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রে রোজালিনা একটি হারবাল রিমেডি চালু করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, এই ভেষজ কোভড-১৯ প্রতিরোধ ও প্রতিকার করতে সক্ষম।
এই ঘোষণা চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের জন্য একটি বড় ধাক্কা যারা কিনা এই রোগে পৃথিবী জুড়ে ৩৬ লাখ মানুষ আক্রান্ত এবং ২ লাখ ৫২ হাজার মানুষ মারা যাওয়ার পরও এর প্রতিকার খুঁজতে অনেকটা হামাগুড়ি দিয়েই এগুচ্ছেন।
রোজালিনা, একজন সাবেক ডিজে যিনি ২০০৯ সালে ৩৪ বছর বয়সে আফ্রিকা মহাদেশের কনিষ্ঠতম জাতীয় নেতা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন, প্রচারণাকালে দাবি করেছেন কোভিড-অরগানিক ঔষধটি ইতোমধ্যে ২ জনকে সুস্থ করে তুলেছে।
এপ্রিল মাসের এক আলোচনায় রোজালিনা সাংবাদিক ও কূটনীতিকদের বলেছিলেন, ” এই হারবাল চা সাত দিনের মধ্যেই কাজ করে।” তার ভাষ্য মতে, সৈনিকরা মাদাগাস্কারের ঘরে ঘরে গিয়ে ১৪৯টি নমুনায় তাদের উদ্ভাবন পরীক্ষা করে দেখেছে। এ পরীক্ষায় একজনেরও কোনো ক্ষতি বা মৃত্যু হয়নি।
এই ঔষধি পানীয় প্রস্তুতকারী, মালাগাছি ইন্সটিটিউট অব এপ্লায়েড রিসার্চ – এর মতে, ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর একধরনের ভেষজ গাছ আর্টেমেসিয়া ও অন্যান্য স্থানীয় গাছ- গাছড়া থেকে এই হারবাল ঔষধটি প্রস্তুত করা হয়।
সর্বপ্রথম ১৯৭০ সালে ম্যালেরিয়া রোগের চিকিৎসার জন্য চীন থেকে আর্টেমেসিয়া নামক গাছটি আমদানি করা হয়েছিল।
এখন এটি হারবাল চা হিসেবে বোতলে করে বাজারজাত করা হচ্ছে এবং মানব শরীরে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে প্রবেশ করানোর উপযোগী করে প্রস্তুত করতে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হচ্ছে বলে রেজোলিনা বলেছেন।
তবে কোভিড-১৯ প্রতিকারের জন্য অপরীক্ষিত কোন ঔষধ প্রয়োগ না করার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। পৃথিবীর অন্যান্য মানুষের মতো আফ্রিকানদেরও পরীক্ষিত একই মানের ঔষধ ব্যবহারের অধিকার রয়েছে বলে মনে করে ডব্লিউএইচও।
ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন ( সিডিসি)ও অপরীক্ষিত ঔষধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে এই বিকল্প ঔষধগুলো কোভিড-১৯ রোগ প্রতিরোধ বা প্রতিকার করতে পারে বলে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।প্রকৃতপক্ষে এগুলো প্রহণ নিরাপদ নাও হতে পারে।
আফিকান ইউনিয়ন বলেছে, এই হারবাল প্রতিকারটির কার্যকারিতা এবং নিরাপত্তার ব্যাপারে বৈজ্ঞানিক উপাত্ত সংগ্রহে মাদাগাস্কারের সাথে আলোচনা চলছে।
উদ্বেগ দূর করে মানুষকে আশ্বস্ত করতে রোজালিনা নিজেই প্রচারণাকালে এক ডোজ কোভিড- অরগানিক সবার সামনে খেয়ে ফেলেন এবং বলেন এটা এমনকি বাচ্চাদের জন্যও নিরাপদ।
তাঞ্জানিয়া, লাইবেরিয়া, নিরক্ষীয় গিনি এবং গিনি বিসাউসহ আফ্রিকার অনেক দেশ এই ঔষধটির চালান গ্রহণ করেছে আবার কেউ কেউ কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
গত রবিবার তাঞ্জানিয়ার প্রেসিডেন্ট জন ম্যাগোফোলি বলেছেন, তিনি এই টনিকটি সংগ্রহের জন্য মাদাগাস্কারে বিমান প্রেরণ করেছেন। এক ভাষণে তিনি বলেন, আমি মাদাগাস্কারের সাথে যোগাযোগ করছি। তিনি আরও বলেন, তারা একটি ঔষধ পেয়েছে। আমরা সেখানে একটি ফ্লাইট প্রেরণ করব এবং ঔষধটি আমাদের দেশে নিয়ে আসব যাতে তাঞ্জানিয়ানরাও উপকৃত হতে পারে।
ইতোমধ্যে গিনি বিসাউ- এর প্রেসিডেন্ট উমারো সিসোকো এমবালো গত শনিবার এয়ার্পোরটে গিয়েছিলেন মাদাগাস্কারের বিনামূল্যে পাঠানো পানীয়টির চালান গ্রহণ করতে।
আফ্রিকার একটি দেশ লেসোথো ছাড়া অন্যান্য সকল দেশেই কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত আফ্রিকা মহাদেশ জুড়ে ১৮৬২ জন কোভিড-১৯ এ মৃত্যুবরণ করেছে।